## জুন মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এই কমিশনারেটের ভ্যাট আদায় প্রবৃদ্ধি ৩৮%
## বিদায়ী অর্থবছর ভ্যাট আদায় ৩১৩৪ কোটি, যা কুমিল্লার ইতিহাসে মাইলফলক
নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটের আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ শতাংশ। জুন মাসে এই কমিশনারেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩৬৯ কোটি টাকা, আর আদায় হয়েছে ৫১০ কোটি টাকা (সাময়িক)। বিদায়ী অর্থবছরের জুন মাসে গত অর্থবছরের জুন মাসের তুলনায় ১৯৫ কোটি বেশি আদায় হয়েছে। আর শুধু জুন মাসে গত অর্থবছরের তুলনায় এই কমিশনারেটের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬২ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছর এই কমিশনারেট মোট ভ্যাট আদায় করেছে দুই হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা (সারচার্জ ছাড়া)। সেখানে বিদায়ী অর্থবছর আদায় করেছে তিন হাজার ১৩৪ কোটি টাকা (সাময়িক)। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় বিদায়ী অর্থবছর ২৫১ কোটি টাকা বেশি আদায় করেছে।

শুধু তাই নয়, বিদায়ী অর্থবছর আদায় করা রাজস্ব কুমিল্লা ভ্যাটের ইতিহাসে মাইলফলক। শুধু ভ্যাট আদায় নয়, অনলাইন রিটার্ন দাখিলে গত মে মাসে টানা দশবার সেরা হয় কুমিলা। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বছরের সেরা মাসিক ১৫৪ শতাংশ ভ্যাট রিটার্ন প্রবৃদ্ধি হয় কুমিল্লার। কুমিল্লা ভ্যাটের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাকালে গত শনিবার পর্যন্ত কুমিল্লা কমিশনারেটের অধীন কর্মরত ছয় জেলায় কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত ছিল না। মহামারীতে নিজেদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এতো সব ব্যতিক্রমী অর্জন করেছে কুমিল্লা ভ্যাট টিম। এর পেছনে রয়েছে নিবিড় নেতৃত্ব, তদারকি, মনোনিবেশ ও দলগত অভিনিবেশ।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুমিল্লার সাফল্য আশাতীত, নজিরবিহীন। যেখানে মে মাসেও কুমিল্লা ছিল ১৩ শতাংশ পিছিয়ে। অভাবিত এ সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে দেড় শতাধিক কর্মকর্তার বিপ্লবের নানান আনকোরা গল্প। একজন রাজস্ব কর্মকর্তা জানতে পারেন, বকেয়া টাকা দেয়ার মতো সামর্থ্য ইটভাটা মালিকের নেই। তিনি পরিচিত একজনের কাছে পরবর্তী সিজনের ইট অগ্রিম বিক্রয় করিয়ে দেন। বিক্রি করা ৯ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করেন। আরেক রাজস্ব কর্মকর্তা মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর সাথে দেখা করে সন্তানদের বোঝান। মরহুমের রেখে যাওয়া ২৭ বছরের পুরনো বকেয়া ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন। অপেক্ষা ও অনুমতির পর চাঁদপুর জেলখানার জেলারের সাথে সাক্ষাত করে ৭ লাখ টাকা বকেয়া আদায় করা হয়। কুমিল্লায় এমন অসংখ্য চমকপ্রদ গল্পের জন্ম গত এক বছরে।

কুমিল্লা কমিশনারেট সূত্রমতে, বছরের শুরুতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রাহমাতুল মুনিম মুজিব বর্ষ ও মহামারীতে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য আহবান এবং বছরব্যাপী সার্বক্ষণিক তদারকি অব্যাহত রাখেন। এই অর্থবছরেই কুমিল্লা বিগত সব অর্থবছরের রেকর্ড ভেঙ্গে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় করেছে। করোনার এই ভয়াবহ নিদানকালেও কুমিল্লা গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায় করেছে ৩ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। এর আগে কুমিল্লা কমিশনারেটের ইতিহাসে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় ছিল ২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে নানামুখী উদ্যোগের ফলে এ অবিশ্বাস্য সাফল্য এসেছে। কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী যোগদানের পর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ও নিবিড় মনিটরিং সার্বিক ব্যবস্থাপনার ফলে রাজস্ব জমা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু জুন মাসে লক্ষ্যমাত্রা ৩৬৯ কোটির বিপরীতে ৫১০ কোটি টাকা আদায়। সিগারেট ব্যতীত অন্যান্য প্রচেষ্টা খাতে ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত মাসিক গড় রাজস্ব ৯৮ কোটি। আর জুন মাসে প্রচেষ্টা খাতে ১৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২৪০ কোটি টাকা আদায় হয়।

কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, সদর দপ্তর কুমিল্লা ও ছয়টি বিভাগে (কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া) রাজস্ব আদায়ের জন্য পৃথক টাস্কফোর্স গঠন করে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা হয়েছে। উৎসে ভ্যাট কর্তন ও জমাদানে ব্যর্থতার দায়ে অনধিক ২৫ হাজার টাকা ব্যক্তিগত জরিমানা আরোপের বিধান জানিয়ে উৎসে কর্তনকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়। যথাসময়ে জমা না করা হলে সুদ ও দন্ডসহ পরবর্তীতে আদায়ের বিধানও অবহি করা হয়।

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের জন্য বিভাগ হতে একাধিক বিশেষ টিম গঠন করা হয়। রাজস্ব আদায়ের জন্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বশরীরে যেতে হয়। পর্যাপ্ত জনবল ও সার্কেল পর্যায়ে গাড়ি না থাকা সত্ত্বেও কর্মকর্তাদের আন্তরিক পরিশ্রমের ফলে এ অর্জন সাধিত হয়েছে।’
অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল হাকিম বলেন, ‘করোনাকালে কুমিল্লা টিমে বিশেষ তৎপরতা অব্যাহত আছে। সাহস ও উদ্যম নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব আদায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যথাযথ রাজস্ব আদায় নিশ্চিতে উদ্যোগী হওয়ায় রাজস্ব আহরণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।’

কুমিল্লা ভ্যাটের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘মহামারীতে আগের বছরের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন। সেখানে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬২ শতাংশ! ভয়কে জয় করে অর্জনকে এ পর্যায়ে নেয়া সহজ ছিল না। একটি ব্যতিক্রমী পরিশ্রমী কর্মপ্রবণ উদ্যমী দলের পক্ষে এমন অর্জন সম্ভব। অর্থবছরের প্রথম থেকে দেড়শ সদস্যের টিমকে ৪৭টি জুম সভায় প্রশিক্ষিত ও নিবিড় মনিটরিং করা হয়েছে। প্রশিক্ষিত টিমের সদস্যরা ডোর টু ডোর গিয়ে সেবা দিয়ে রাজস্ব নিশ্চিত করেছে। সার্কেলগুলোর মধ্যে লাল-হলুদ-সবুজের সুস্থ প্রতিযোগিতার অভূতপূর্ব সাফল্যের অন্যতম কারণ। টিমের সদস্যরা রাত ১১টা পর্যন্ত মাঠে অফিসে থেকে সাফল্য তালিকার ওপরে আসতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সর্বোপরি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ টিম সদস্যদের পরিশ্রম ও সাফল্যের পিপাসা কুমিল্লা কমিশনারেটকে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ও অনলাইন রিটার্ন জমায় উপর্যুপরি সাফল্য এনে দিয়েছে।’
###