প্রতিনিধি, নীলফামারী : মাত্র কয়েক দিন পরেই দুর্গাপূজা। প্রতি বছরের ন্যায় শুরু হচ্ছে হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর এই উৎসবকে ঘিরে নীলফামারীতে ৮৩১টি পূজা মন্ডপে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্ততি। প্রতিমায় এখন চলছে রঙ তুলির আঁচড়, গেট নির্মাণ ও ঝাঁড়বাতির কাজ (লাইটিং)।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাশপিয়া তাসরিন জানান, জেলায় ৮৩১ টি মন্ডপে দুর্গা উৎসব পালিত হবে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষে সব ধরনের প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজাকে নির্বিঘেœ সম্পন্ন করতে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মন্দির কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে পুলিশ সদস্যরা।
তিনি বলেন, ৮৩১টি মন্দিরের মধ্যে নীলফামারী সদরে ১৫ ইউনিয়নে ২৬৩টি, ডোমারে ১০ ইউনিয়নে ১০৫টি, ডিমলায় ১০ ইউনিয়নে ৭৬টি, জলঢাকায় ১১ ইউনিয়নে ১৭৩টি, কিশোরগঞ্জে নয় ইউনিয়নে ১২৯টি ও সৈয়দপুরে পাঁচ ইউনিয়নে ৮৫টি মন্দির রয়েছে।
জেলা পুজা উদযাপন পরিষদ জানায়, আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ১৩ অক্টোবর দশমীতে শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বিষর্জন হবে শারদীয় দুর্গাৎসব। এদিকে, বছর ঘুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এই উৎসবকে ঘিরে মন্ডপে মন্ডপে বেড়েছে প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততা।
জেলা শহরের হাড়োয়া মন্দিরের মৃৎশিল্পী রমানাথ রায় বলেন, আমরা প্রতিমা গুলোকে রং ও তুলির আঁচড় দিয়ে সাজিয়ে তুলছি। আগে ৮০-৮৫ হাজার টাকায় পুরো প্রতিমা তৈরি করা থেকে সাজানো পর্যন্ত খরচ হত। এখন উপকরনের দাম ও কারিগরের মজুরী বৃদ্ধির কারণে খরচ প্রায় তিনগুণ। তবে পেশাদারিত্ব হিসেবে একাজ করতেই হবে। কারণ এটা আমাদের ধর্মীয় রীতিনীতি।
এদিকে, জেলা পূজা উদযাপন কমিটির আহ্ব্বায়ক উত্তম কুমার রায় বাদল জানান, প্রতিবারের ন্যায় এবারও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জেলায় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই পূজা উপলক্ষে আমরা সার্বক্ষণিক মন্দির গুলো মনিটরিং করছি। সেই সাথে সকলের সহযোগিতা নিয়ে জেলা বাসিকে একটি সুন্দর পূজা উপহার দেয়ার জন্য আমরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছি।
জেলা শহরের হাড়োয়া মন্দিরের পুরোহিত মহেষ চন্দ্র গাঙ্গলী বলেন, শেষ মুহূর্তে দেবীকে পড়ানো হচ্ছে পোশাক-পরিচ্ছেদসহ অন্যান্য অনুসঙ্গ। পঞ্জিকা মতে আগামী ৯ অক্টোবর শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। আর ১৩ অক্টোবর দশমীতে চোখের জলে দেবী বির্সজনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গাপূজা।
ওই মন্দিরের সাধারন সম্পাদক মানিক কুমার কুন্ডু বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করেছি। আশা করি,এবারের পূজা আনন্দ ও নিরাপদে উৎযাপন করতে পারব। পূজা মন্ডপ ঘিরে সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক প্রস্তত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। তিনি আরও বলেন, মন্ডপগুলোতে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা ঘটাতে না পারে সে জন্য পুলিশ সর্বদা কাজ করবেন। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এ উৎসবে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে জেলার ৮৩১টি পূজা মন্ডপে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শতভাগ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে মেম্বার, চেয়ারম্যান, চৌকিদার, আনসার, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। আশা করি, কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই, ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যের মধ্যদিয়ে পালিত হবে শারদীয় দুর্গা উৎসব।