শেখ আবু তালেব: এখনও শেয়ার বিক্রির চাপে রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। বিক্রয় চাপে কমে গেছে অধিকাংশ শেয়ারের দর। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের সক্রিয়তায় নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক ধারায় ফেরেছে সূচক ও লেনদেন। এতে লেনদেন বৃদ্ধি পেলেও হারানো সূচক ফিরে পায়নি প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জ (ডিএসই)।
গত ২৮ অক্টোবর শেষ হওয়া সপ্তাহের লেনদেন তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। জানা গেছে, ডিএসইতে গত সপ্তাহে আগের চেয়ে ২৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ লেনদেন বৃদ্ধি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেতিবাচক ধারায় শুরু হওয়া পুঁজিবাজার সপ্তাহের মধ্যবর্তী সময়ে ইতিবাচক ধারায় ফেরে। কিন্তু সপ্তাহ শেষেও হারানো সূচক ফিরে পায়নি। এতে নেতিবাচক ধারায় সূচকের লেনদেন শেষ হয়।
মূলত প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হওয়ায় সূচকের ইতিবাচক ধারা ফেরে। এই সময়ে ব্যাংক এবং ওষুধ খাতের শেয়ারে মনোযোগ দেখা গেছে তাদের বেশি করে। ফলে সপ্তাহ শেষে ডিএসইর মোট লেনদেনে ব্যাংক খাতের লেনদেন ছিল সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক আট শতাংশ। এরপরই ছিল ওষুধ খাতের ১৩ দশমিক চার শতাংশ।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তায় সপ্তাহ শেষে বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পায় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই। এ বিষয়ে শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর প্রধান কর্মকর্তা জানান, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। এ সময়ে তারা মৌলভিত্তির কোম্পানিতে বেশি মনোযোগী ছিলেন। ফলে বাজারের ভালো অবস্থানে থাকা কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বেশি হয়েছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেন বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে মোট ৩৮২টি সিকিউরিটিজ লেনদেনে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে দর বৃদ্ধি পায় মাত্র ২০৫টির, কমে যায় ১৫৫টির, অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির ও লেনদেন হয়নি চারটির। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতায় বেশি মনোযোগী ছিল। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এখন অনেক কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা শুরু করেছে। কাক্সিক্ষত লভাংশ পাওয়া ও প্রত্যাশার বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা শুরু করছেন। এজন্য অনেকেই শেয়ার হাতবদল করা শুরু করেছেন। এতে শেয়ার বিক্রয় চাপ ছিল বেশি।
এর প্রভাবে সূচকের পতন হয়। ফলে আগের সপ্তাহের চেয়ে আইটি, প্রকৌশল, ওষুধ, সিমেন্ট খাতে কিছুটা লোকসান দেখতে পান বিনিয়োগকারীরা। এই সময়ে অবশ্য আগের সপ্তাহের চেয়ে মুনাফা দেখা যায় ব্যাংক, সাধারণ বিমা, বস্ত্র, ট্যানারি, জীবন বিমা ও মিউচুয়াল ফান্ডে। এভাবে বিনিয়োগকারীরা মূলত এই কয়টি খাতেই বেশি সক্রিয় ছিলেন।
লেনদেন ইতিবাচক ধারায় শেষ করায় আলোচিত সময়ে বেড়েছে বাজার মূলধনও। অধিকাংশ শেয়ারের দরপতন হলেও বাজার মূলধন বেড়েছে ছয় হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। এই সময়ে ডিএসইর মোট লেনদেনে শীর্ষে উঠে আসে ?ব্যাংক খাতের কোম্পানি। মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক আট শতাংশই অবদান রাখে খাতটি। এছাড়া জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত ছয় দশমিক এক শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ, প্রকৌশল খাত ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ, বস্ত্র খাত ৯ দশমিক দুই শতাংশ ও সিমেন্ট খাত তিন শতাংশ অবদান রাখে।
একক কোম্পানি হিসেবে ডিএসইতে শেয়ারের দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসে হামিদ ফেব্রিক্স। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বোচ্চ বাড়ে ৬৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। এরপরই রয়েছে এশিয়া ইন্স্যুরেন্স ও মালেক স্পিনিং। অন্যদিকে আলোচিত সময়ে শেয়ারের দর হারানোর শীর্ষ তালিকায় ছিল হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, খুলনা প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং এবং সোনারগাঁও টেক্সটাইল।