শেষ সময়ে চড়া গরুর বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোরবানির ঈদের আগের দিন রাজধানীর পশুরহাটে গরুর চেয়ে ক্রেতার সমাগম বেশি থাকায় দামও ছিল চড়া; তবে কেউ খালি হাতে ফিরছিলেন না। খবর: বিডিনিউজ

শনিবার সকালে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে গাবতলীতে গরু কিনে হাটেই রেখেছিলেন মিরপুরের হাসান আলী। দুপুরের পর সেই গরু নিয়ে তার বাসায় ফেরার সময় দাম জিজ্ঞেস করতেই পাশ থেকে ব্যাপারী বলে উঠলেন, “ভাই সকালে না বিক্রি করে বিকালে বিক্রি করলে আরও ৩০ হাজার টাকা বেশি পেতাম।”

বিকাল পর্যন্ত ঘুরে গাবতলীসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাটে গরু সরবরাহ কম দেখা গেছে। হাটগুলোতে ক্রেতা গিজগিজ করলেও সেই অনুপাতে গরুর দেখা মিলছিল না। হাটের জন্য ইজারাদার বাঁশ দিয়ে যে জায়গা নির্ধারণ করে রেখেছে, সেসব জায়গা ফাঁকা দেখা গেছে।

মোহাম্মদপুরের বসিলায় ব্যক্তি মালিকানার খালি প্লটে গড়ে উঠেছে কোরবানির পশুরহাট। এ হাটের বেশিরভাগ জায়গা ফাঁকা। ক্রেতার চেয়ে গরুর সংখ্যা একেবারেই কম। যা গরু আছে তা নিয়ে কিছু ক্রেতার টানাটানি দেখা গেলেও অধিকাংশই না কিনে ফিরে যাচ্ছিলেন।

এ হাটের ইজারাদারের কর্মী হাসান আরেফিন বলেন, গরু নিয়ে ব্যাপারীদের আনতে তারা চেষ্টা করছেন। কিন্তু সে তুলনায় এখানে সে রকম কেউ আসেননি।

কেরাণীগঞ্জের আটিবাজার থেকে ছয়টি মাঝারি গরু নিয়ে এসেছিলেন জিয়াউর রহমান; সকালে এসে বেলা ৩টার মধ্যেই বিক্রি করেছেন পাঁচটি। “মাঝারি গরুর চাহিদা অনেক বেশি। যেগুলো বিক্রি করেছি মোটামুটি লাভ হয়েছে। আরও থাকলে বিক্রি হয়ে যেত।”

বসিলার এই হাটে অধিকাংশ গরু এসেছে কেরাণীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে। এ উপজেলার বেউতা থেকে শনিবার দুপুরের দিকে দুটি গরু নিয়ে আসেন রতন সরকার। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি বলেন, “কাছাকাছি তো। বাজার বুঝে তারপর হাটে গরুগুলো নিয়ে আসি। একটায় ভালোই লাভ হয়েছে। আরেকটার কাস্টমারদের সাথে দরকষাকষি চলছে।”

ছোট গরুর চাহিদার কারণে বড় গরু নিয়ে বিপদগ্রস্ত মনে হল পাবনার কবির হোসেনকে। তার কথায়, “চোখের সামনে ছোট গরু গুলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আমার গরুগুলোর চাহিদা খুব একটা নেই।”

এ হাটের পাশেই মোহাম্মদপুরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম সেন্টুর বাসা। তবে তিনি সেখানে পরিবার নিয়ে থাকেন না। শনিবার বিকালে বাসার সামনে তাকে দেখা গেল। “আমি হাট কেমন চলছে দেখতে এসেছি। বড় গরুর চাহিদা একবারে কম। আমার পরিচিত এক ব্যক্তি ১২টি বড় গরু এনেছে, দুই দিনে ৭টি বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলো বিক্রি না হলে ফেরত নিয়ে যাবে।” তবে চাহিদা অনুযায়ী গরু না থাকায় ক্রেতারা অন্য হাটে চলে যাচ্ছে বলে জানালেন তিনি।

এ হাটের পাড়েই বুড়িগঙ্গা নদীর শাখায় রয়েছে ট্রলার। মনমত গরু না পেয়ে কিংবা দাম পোষাতে না পেরে অনেকেই সেই ট্রলারে করে ছুটছেন গাবতলী গরুর হাটে। সাজেদ হাসান নামে একজনের সঙ্গে ট্রলারে কথা হচ্ছিল। তার ভাষ্য, এই হাটে (বসিলা) কোনো গরুই নাই। “গরুর সংখ্যা অনেক কম, ক্রেতা বেশি। সে সুযোগ নিয়ে দাম চড়িয়ে ব্যাপারীরা বেশি লাভের আশায় গরু ছাড়ছেন না, বসে আছে।”

ট্রলার চালক শহীদুল হোসেনকে ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেল। বসিলা থেকে যাত্রী নিয়ে গাবতলী পৌঁছে দিচ্ছেন ৫০ টাকায়। তিনি বলছিলেন, “বসিলায় গরু একবারে কম। এজন্য সবাই ছুটছেন গাবতলীতে। এক ট্রিপে ছয়-সাতশ টাকা করে হচ্ছে। গত দুইদিন ভালই আয় হয়েছে।”

গাবতলীতে গিয়ে দেখা গেল ক্রেতা গিজগিজ করছে শেষ বেলায় কেনাকাটার জন্য। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গরু নাই। বড় বড় গরুগুলো সামিয়ানার নিচে বসে আছে। ব্যাপারীরা পাশে দাঁড়ানো। ক্রেতা আসছেন, দাম শুনে চলে যাচ্ছেন।

সেখানে ব্যাপারী শহীদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। চারদিন আগে মানিকগঞ্জ থেকে তিনটি বড় গরু এনেছেন। জানালেন, তিনদিনে একটি গরু ৩ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাকি দুইটি নিয়ে শেষ বেলা পর্যন্ত তিনি থাকবেন।

তবে ছোট ও মাঝারি গরুগুলোর দামও চড়া। ৮০ হাজার টাকার নীচে কোনো গরুই মিলছিল না। ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশনের এক কর্মকর্তা ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে একটা গরু কিনে দেওয়ার জন্য ইজারাদারের কাছে অনুরোধ করেন।

ইজারাদার একজন লোক দিয়ে তাকে সহযোগিতাও করেন। কিন্তু চড়া দাম দেখে ইজারাদারের ওই লোকের সহযোগিতার আশা ছেড়ে দেন নগর সংস্থার ওই কর্মকর্তা। গাবতলীর পশুর হাটের ইজারাদারের কর্মী লুৎফর রহমান জানান, গরুর দাম বেশ বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ একবারে কম। শুক্রবার বিকাল থেকে গরু আসার গতি কমে গেছে।

“যে গরু শুক্রবার ১ লাখ টাকা ছিল সে গরু আজ দুপুর পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়।” ব্যাপারী আব্দুর রহিম জানালেন, তিনি বুধবার বিশটি গরু এনে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ১৪টি বিক্রি করেছেন। “চাহিদা আছে, তবে সে রকম সরবরাহ নেই।”

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০