Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 8:25 pm

শেষ হলো বাণিজ্যমেলা: ১১৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেষ হলো ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। নির্ধারিত এক মাসের পর অতিরিক্ত চার দিন শেষে গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় মেলার। এবারের মেলায় ১১৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার পণ্য ও সেবা কেনাবেচা হয়েছে। রফতানির আদেশ পাওয়া গেছে ২৪৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার। এবারের মেলায় রফতানি আদেশের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার বেশি। মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা জানানো হয়।

মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আমি বাণিজ্যমেলায় এসেছি। এখানকার আয়োজন দেখে আমার মনে হয়েছে, অত্যন্ত সৃজনশীলভাবে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সৃজনশীল কাজে আজ সারা বিশ্বে বাংলাদেশিরা সাফল্য অর্জন করছে। এদেশের কৃষকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’

সভায় বাণিজ্যমেলার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা জানানো হয়। মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআই’র সভাপতি আবদুল মাতলুব আহ্মাদ প্রমুখ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মেলায় বিপুল মানুষের সমাগম হয়েছে। এর মাধ্যমে আবার স্পষ্ট হয়েছে যে, মেলা হচ্ছে সংস্কৃতির একটি নাগরিক উপস্থাপনা।’

সভাপতির বক্তব্যে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা বলেন, ‘এবারের মেলায় ৩০ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ডলার (২৪৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা) রফতানি আদেশ এসেছে, যা গত বছরের রফতানি আদেশের চেয়ে শূন্য দশমিক ২৮ মিলিয়ন ডলার বেশি। এছাড়া মেলায় মোট কেনাবেচার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।’

উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলোতে মেলা শেষে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর দেওয়া হিসাবমতে বাণিজ্যমেলার মাধ্যমে ২০১০ সালে ২২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, ২০১১ সালে ২৫ কোটি, ২০১২ সালে ৪৩ কোটি ১৮ লাখ, ২০১৩ সালে ১৫৭ কোটি টাকার রফতানি আদেশ আসে। ২০১৪ সালে ৮০ কোটি, ২০১৫ সালে ৮৫ কোটি এবং ২০১৬ সালে ২৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা রফতানি আদেশ পাওয়া যায়।

ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘মেলায় দেশি দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। এছাড়া বিদেশি দর্শনার্থীদেরও আগমন ঘটেছে। এটা বাণিজ্যমেলার সাফল্যের উদাহরণ।’

এর পাশাপাশি বাণিজ্যমেলা বিনোদনেরও কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিনোদন ও বিপণন কার্যক্রম একসঙ্গে পরিচালনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে বাঙালি আবেগ ও আমোদপ্রবণ জাতি।’

ইপিবির পক্ষ থেকে পোশাক খাতের পাশাপাশি হিমায়িত খাদ্য, বাইসাইকেল, চামড়া ও পাটজাত পণ্যের রফতানির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

মেলায় অতিথিদের বক্তব্য শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এর মধ্যে বিক্রির ওপর সর্বাধিক মূল্য সংযোজন কর (মূসক) দেওয়ায় ওয়ালটনকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

তথ্যমতে, ওয়াল্টন এবারের মেলায় ৩৪ লাখ ২৮ হাজার ৭৫৪ টাকা মূসক দিয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা মূসক দিয়ে র‌্যাংগস ইলেক্ট্রনিকস দ্বিতীয় ও ২১ লাখ ৯৫ হাজার ২৫৩ টাকা দিয়ে হাতিল কমপ্লেক্স লিমিটেড তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে।

মেলায় সেবা দেওয়ার জন্য ডিএমপি, র‌্যাব, এসবি, ডিবি, এনএসআই, ডিজিএফআই, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস, গণপূর্ত অধিদফতর, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ভোক্তা অধিকার রক্ষা অধিদফতরসহ প্রায় ১৫টি সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টলের সাজসজ্জার সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য বিবেচনায় ৩৬টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করে ওয়ালটন। আখতার ফার্নিচার, হাতিল কমপ্লেক্স ও আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ যৌথভাবে দ্বিতীয় এবং নাদিয়া ফার্নিচার, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস তৃতীয় স্থান অধিকার করে।

সাধারণ প্যাভিলিয়ন পর্যায়ে কারুপণ্য লিমিটেড, আলিবাবা ডোর অ্যান ফার্নিচার ও মৌসুমী ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন পর্যায়ে রহিম আফরোজ, আবদুল মোনেম লিমিটেড, গোল্ডেন হার্ভেস্ট লিমিটেড ও বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন পর্যায়ে রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, আহমেদ ফুড প্রোডাক্টস ও আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড পুরস্কার পায়। প্রিমিয়ার স্টল পর্যায়ে রানা টেক্সটাইল, প্রাণ ফুডস, সিঙ্গার বাংলাদেশ, হেলাল অ্যান্ড ব্রাদার্স, রূপকালা বিডি, সাধারণ স্টল পর্যায়ে অল ওয়েল মার্কেটিং লিমিটেড, স্মার্ট সকস, কাশ্মীরি আচার অ্যান্ড ফুড, কুষ্টিয়া হস্তশিল্প, তিশা জামদানি সম্মাননা পায়।

সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন পর্যায়ে জয়িতা ফাউন্ডেশন, বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন ও জুট ডাইভারসিফিকেশন অ্যান্ড প্রমোশন সেন্টার, সংরক্ষিত স্টল পর্যায়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, মিল্ক ভিটা, এসএমই ফাউন্ডেশন সম্মাননা পায়। এছাড়া নারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মনিপুর তাঁত এম্পোরিয়াম, টোটাল প্যাক অ্যান্ড প্যাকেজিং, এ-ওয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মা এন্টারপ্রাইজ, খাবারের দোকানের মধ্যে নোয়া ফুড প্রোডাক্টস এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাইল্যান্ডের অফিস অব কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স ও অরিজিনাল ইস্তাম্বুল ক্রিস্টালকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, এবারের বাণিজ্যমেলায় এ বছর বিভিন্ন আকারের ২৮টি স্টল বেশি রাখা হয়েছে মূল পরিকল্পনায়। এর মধ্যে ৬৪টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন (পিপি), ১৭টি জেনারেল প্যাভিলিয়ন (জিপি), ২৮টি ফরেন প্যাভিলিয়ন (এফপি), ৩৭টি প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন (পিএমপি), ২৫টি জেনারেল মিনি প্যাভিলিয়ন (জিএমপি), ৮টি ফরেনি মিনি প্যাভিলিয়ন (এফএমপি), ৭৬টি প্রিমিয়ার স্টল (পিএস), ১৪টি ফরেন প্রিমিয়ার স্টল, ২৯২টি জেনারেল স্টল রাখা হয়েছে। এছাড়া আটটি রিজার্ভ প্যাভিলিয়ন, ২৪টি খাবারের স্টল ও কয়েকটি রেস্তোরাঁ ছিল।