অংশীদার হওয়ার জন্য চীন প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকার মতো দিয়েছে এবং তারা কারিগরি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরও ৩০০ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করবে। এতে দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং তারা বিনিয়োগে উৎসাহী হবে। বাজারে ২০-৩০ টাকার একটি শেয়ার ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় যাওয়ার পর তাকে তালিকাচ্যুত বা স্থগিত করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, আগে না করে এত দর বাড়ার পরে কেন এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়? আর যদি ব্যবস্থা নেওয়াই হয় তাহলে কেন অস্বাভাবিকভাবে শেয়ারের দর কমার সময় নেওয়া হয় না? তাহলে কি নিয়ন্ত্রক সংস্থা চায় যে, কোনো শেয়ারের দর না বাড়–ক? গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আহছান উল্যা এবং এনবিইআরের চেয়ারম্যান ড. আহসানুল আলম পারভেজ।
মোহাম্মদ আহছান উল্যা বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজার ভালো হওয়ার কিছু সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা সেরকম কোনো গতিবিধি দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হয়তো বাজারের এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, কারণ প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তি বিনিয়োগকারী প্রত্যেকেই চায় নিরাপদ বিনিয়োগ করতে। সামনে জাতীয় নির্বাচনে দেশের কী অবস্থা হয় সেই চিন্তায় সবাই ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতি অনুসরণ করছে। তাছাড়া চীনের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তিটি হলো এবং চীনের যে দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ আমাদের কৌশলগত অংশীদার হলোÑতাদের যেই ফান্ডটি বাজারে দেওয়ার কথা ছিল তা হয়তো আজ-কালকের মধ্যেই দিয়ে দেবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নেতাদের কাল (আজ) হোটেল সোনারগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলন করার কথা। আর এটি অবশ্যই বাজারের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। অংশীদার হওয়ার জন্য চীন প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকার মতো দেবে এবং তারা কারিগরি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরও ৩০০ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করবে। এতে দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়বে এবং তারা বাজারে বিনিয়োগে উৎসাহী হবে। এটিও পুঁজিবাজারের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক দিক।
আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, পুঁজিবাজারে বিভিন্ন সময়ে একেকটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে আমরা বলি এবার বাজার ভালো হবে, বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে এবং ভাইব্রেন্ট হবে প্রভৃতি। কিন্তু আমরা অধিকাংশ সময়ই তার উল্টো চিত্র লক্ষ করি। কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনের যেই বিনিয়োগটি বাজারে আসবে, সেটির একটি করে অংশ প্রত্যেক ব্রোকার পাবেন। আর ওখানে আমার কিছু বন্ধুবান্ধব আছে, তাদের কাছে জানতে চাইলাম, যে ফান্ডটি তোমরা পাবে তা কি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে? উত্তরে তারা বলে, প্রশ্নই আসে না। এই টাকাটি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। অনেকেই যারা আশাবাদী যে, চীনের কৌশলগত অংশীদারিত্বের কারণে পুঁজিবাজারে যে এক হাজার কোটি টাকার মতো ফান্ড আসবে, তার কিছু পরিমাণ অর্থ বাজারে বিনিয়োগ হবে। তাদের কাছে আমার প্রশ্নÑপুঁজিবাজারে এমন কী আছে যার কারণে নিজের অর্থ বাজারে বিনিয়োগ করবে? যেখানে এ ক্যাটেগরিতে থাকার জন্য ভালো ভালো অনেক কোম্পানিই নামমাত্র ডিভিডেন্ড দিচ্ছে, অথচ তাদের প্রকৃত ডিভিডেন্ড দেওয়ার পরিমাণ আরও অনেক বেশি হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তারা দিচ্ছে না। এর জন্য কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে না। কাজেই এখানে বদ্ধ উš§াদ অথবা গ্যাম্বলার যদি কেউ থাকে, তারাই আবার বিনিয়োগ করবে। তাছাড়া বাজারে ২০-৩০ টাকার একটি শেয়ার ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় যাওয়ার পর তাকে তালিকাচ্যুত বা স্থগিত করা হলো। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, আরও আগে না করে এত দেরিতে কেন এই ব্যবস্থা নেওয়া হলো? আর যদি ব্যবস্থা নেওয়াই হয় তাহলে কেন অস্বাভাবিকভাবে শেয়ারের দর কমার সময় নেওয়া হয় না? তাহলে কি নিয়ন্ত্রক সংস্থা চায় যে, কোনো শেয়ারের দর না বাড়–ক? এটি আসলেই একটি চিন্তার বিষয়।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম