মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বাড়লে এর কারণ জানতে চেয়ে নোটিস জারি করা হলেও টানা দরপতনের কারণ জানতে চায় না বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি অথবা স্টক এক্সচেঞ্জ। ফলে কালেভদ্রে শেয়ারের দর বাড়ার কারণ জানতে পারলেও দর কমার কারণ কখনও জানতে পারেন না বিনিয়োগকারীরা। কোনো কোম্পানির শেয়ারদর কমার কারণ জানানোর বিধান না থাকায় এটি জানা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন তারা। যে কারণে দরপতন হলে নীরব দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না তাদের। এ পরিস্থিতির অবসান চান বিনিয়োগকারীরা। দর বাড়ার পাশাপাশি কমার কারণও জানতে চান তারা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সায়হাম কটন, রহিমা ফুড, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, সিমটেক্স, ইমাম বাটন, দুলামিয়া কটনসহ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদর বেশ কয়েক কার্যদিবস ধরে অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে দেখা যায়। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে নোটিস দিয়েছে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ।
অন্যদিকে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বছরের পর বছর ধরে কমলেও ডিএসইর পক্ষ থেকে ওই কোম্পানির শেয়ারদর কমার কারণ জানতে চাওয়া হয় না এবং পতন রোধেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ফলে এ বিষয়ে ক্ষোভ রয়েছে বিনিয়োগকারীদের। তারা বলেন, দর বাড়ার পাশাপাশি দর কেন কমছে, তাও জানার অধিকার তাদের রয়েছে। তাই এ বিষয়ে নিয়ম হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তারা।
সম্প্রতি ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, সোনারগাঁ টেক্সটাইল, বিডি ফাইন্যান্স, এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এইচআর টেক্সটাইল, নূরানী ডায়িং, অলটেক্সসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর পতন অব্যাহত রয়েছে । দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এসব শেয়ারের দর কমেছে ছয় থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত। কিন্তু বিষয়টি জানানোর কোনো বিধান না থাকায় এর কারণ জানতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
বিনিয়োগকারীরা জানান, ডিএসইর পক্ষ থেকে যেসব কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে, এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক অভিযোগ ছিল। বলা হয়েছিল এসব শেয়ারের দর অতিমূল্যায়িত হয়ে গেছে। সে সময়ও ডিএসইর কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাবে কর্তৃপক্ষ একই জবাব দিয়েছিল ‘দর বৃদ্ধির পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই’। কোম্পানির পক্ষ থেকে এ ধরনের জবাব বরাবরই দেওয়া হয়। আর স্টক এক্সচেঞ্জ দর বৃদ্ধির নোটিস দিয়ে এবং তা প্রকাশ করে দায়িত্ব শেষ করে থাকে। কিন্তু দর বৃদ্ধির পেছনে দায়ীদের খুঁজে বের করা হয় না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকেও এসব বিষয়ে তেমন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না।
এ প্রসঙ্গে লুৎফর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিজকে বলেন, সংশ্লিষ্টদের উচিত এ বিষয়টিতে নজর দেওয়া। দর বাড়লে প্রতিষ্ঠান কারণ দর্শাতে বাধ্য থাকবে কিন্তু দর কমলে কোনো ভূমিকা থাকবে না এমনটি হতে পারেন না। এটা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক ধরনের প্রত্যারণা।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, শেয়ারের দর যখন অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে তখন প্রতিষ্ঠানের কাছে কোনো সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। এটা অবশ্যই ভালো দিক। কারণ এতে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক হওয়ার সুযোগ পান। অন্যদিকে কোনো শেয়ারের দর অস্বাভাবিকভাবে কমলেও এর কারণ জানতে চাওয়া হয় না। এটা ঠিক নয়। আমি মনে করি এ বিষয়ে নিয়ম থাকা উচিত। শেয়ারের দর কমে যাওয়ার পেছনে কোনো নেগেটিভ খবর রয়েছে কিনা তা জানার অধিকার বিনিয়োগকারীদের রয়েছে। তিনি বলেন, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন নিয়ম রয়েছে। আমাদের দেশেও এটা থাকা দরকার।
একই বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারদর বাড়লে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিও বাড়ে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়। আর দর কমে গেলে ঝুঁকিও কমে যায় সেজন্য হয়তো কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ভাবেন না। তবে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। দর বাড়ার পাশাপাশি কমার কারণ জানতে পারলে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন।
এ ব্যাপারে ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক সময় কোম্পানিগুলো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে ফায়দা হাসিল করে থাকে। কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কতিপয় ব্যক্তি পুঁজিবাজার কারসাজি চক্রের সঙ্গে আঁতাত করে শেয়ারদর নিয়ন্ত্রণের জন্য এ তথ্য ব্যবহার করে। তথ্য প্রকাশের আগেই তারা বিভিন্নভাবে তা বাজারে ছড়িয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। তবে আমরা আমাদের দায়িত্ব অনুযায়ী অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কোনো কারণ আছে কিনা, তা জানতে চাই। মূলত বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করার লক্ষ্যে এটি করা হয়ে থাকে। তবে বাজারে কোনো ধরনের ম্যানিপুলেশন হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি বিএসইসি কর্তৃপক্ষ।
Add Comment