মাত্র সপ্তাহের ব্যবধানে উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করেছে শেয়ারবাজার। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মুদ্রানীতি ঘোষণার পর শুরু হওয়া দরপতন গত কয়েক দিনে রূপ নিয়েছে বড় পতনে। এ ধাক্কায় কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর নেমে এসেছে ফেসভ্যালুর নিচে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়া এবং আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার হাতবদলের কারণেই এমনটি ঘটছে বলে অনেকের অভিমত। তাদের বক্তব্যকে আমরা যথার্থ বলেই মনে করি। এতে অনেক বিনিয়োগকারী যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তা বলা বাহুল্য। বাজারের প্রতিও আস্থা হারিয়ে ফেলছেন তারা।
সহযোগী এক দৈনিককে বাজার-সংশ্লিষ্ট ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ পরিস্থিতি সাময়িক। শিগগিরই এর অবসান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা। নিকট অতীতে বাজারের যে গতিবিধি আমরা লক্ষ করেছি এবং বিশেষজ্ঞরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্যে আশ্বস্ত হওয়ার অবকাশ আছে। কিন্তু কথা হলো, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সেটা বুঝবেন কীভাবে? আমাদের দেশে শেয়ারবাজারে যারা বিনিয়োগকারী, তাদের সিংহভাগেরই বাজার সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। অল্প সময়ে কীভাবে লাভবান হওয়া যায়, সে চিন্তা নিয়ে বাজারে আসেন তারা। পেশাদার কোনো পরামর্শকের কাছে যাওয়ার সুযোগ তাদের হয়ে ওঠে না বাস্তব কারণে। এ অবস্থায় আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের যদি আশ্বস্ত করা না হয়, তাহলে একদিকে তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, অন্যদিকে বাজারের নি¤œমুখী প্রবণতাও অব্যাহত থাকবে। দুই পক্ষের জন্যই এটা হবে বড় ক্ষতি।
আমরা মনে করি, এ অবস্থায় সব বিনিয়োগকারীকে আশ্বস্ত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) এগিয়ে আসা উচিত। তাহলে বাজারের প্রতি আস্থাও তৈরি হবে। বিনিয়োগকারীরা পুনরায় ফিরে এলে বাজার ফিরতে পারে ইতিবাচক ধারায়। মনে রাখা দরকার, প্রত্যেকেই বিনিয়োগ করেন মুনাফার আশায়। কেউই পুঁজি হারাতে চান না। কিন্তু একজন বিনিয়োগকারী কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন এ ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার মতো পেশাদার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে দেশে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি এ সময় পাশে দাঁড়াতে না পারে, তাহলে এর দায়ও তারা এড়াতে পারবেন না। ভালো মুনাফার জন্য মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন অনেক বিশ্লেষক। আমরা চাইবো, এ ধরনের কোম্পানি বাছাইয়ের কৌশলগুলোও স্পষ্ট করা হবে বিনিয়োগকারীদের কাছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হলো, বিনিয়োগকারীদের জ্ঞানদানের বিদ্যমান আয়োজন খুব অপ্রতুল। এটা পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে বাজার পরিস্থিতি এমন হতো বলে মনে হয় না। বস্তুত যে বাজার খুব বেশি ওঠানামা করে, তাতে সতর্ক ও বিচক্ষণ বিনিয়োগকারীরা খুব আগ্রহ বোধ করেন না। এজন্য দেশে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগবিষয়ক জ্ঞানের প্রসার ঘটানো দরকার শুধু ব্যক্তি নয়, বাজারের স্বার্থে। আমরা জানি, এসইসি মাসে দুটি কর্মশালা পরিচালনা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। নিকট অতীতে বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটের (বিএএসএম) মতো শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান গঠনের উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে সংস্থাটিকে। আমরা চাইবো, এ উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। কেননা শুধু অভিজ্ঞতার ওপর শেয়ার কেনাবেচা কিংবা কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিজ্ঞানসম্মত হতে পারে না। সিংহভাগ বিনিয়োগকারীর এমন হওয়াটা আরেক দিক থেকে শঙ্কার। এতে কারসাজির সুযোগ বেড়ে ওঠে। সন্দেহ নেই, দেশের অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে শেয়ারবাজারের ভূমিকাও হয়ে উঠছে গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থায় শেয়ারবাজার নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রাপ্ত একটি জনগোষ্ঠী যদি গড়ে তোলা না যায়, তাহলে বাজারের এমন চিত্র ভবিষ্যতেও ঠেকানো মুশকিল হবে।
Add Comment