নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ২০০৭ সালের শেয়ার কারসাজির ঘটনায় অভিযুক্ত ‘বাংলাদেশ ওয়েলডিং ইলেকট্রোড’ (বিডি ওয়েলডিং)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম নুরুল ইসলাম ও ‘ডেইলি ইন্ডাস্ট্রি’ পত্রিকার সম্পাদক এনায়েত করিমকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এর আগে পুঁজিবাজার মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ২০১৫ সালের আগস্টে প্রদত্ত এক রায়ে অভিযুক্তদ্বয়কে তিন বছর কারাদণ্ডসহ ২০ লাখ টাকা করে মোট ৪০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
উল্লিখিত রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে সম্প্রতি উচ্চ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া অভিযুক্ত দুজনকেই বেকসুর খালাস দিয়েছেন। রায়ের অনুলিপি ইতোমধ্যেই পুঁজিবাজারবিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, উচ্চ আদালতে আসামিদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট এসএম রেজাউল করিম ও ইউসুফ হুসাইন হূমায়ুন। আর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষে ছিলেন শুভ্র চক্রবর্তী ও প্রবীর নিয়োগী।
এর আগে ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট পুঁজিবাজারবিষয়ক ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবীর এসএম নুরুল ইসলাম ও এনায়েত করিমকে তিন বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে উভয়কে ২০ লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে অভিযুক্তরা একই বছরে উচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন।
বিডি ওয়েলডিংয়ের শেয়ার কারসাজির অভিযোগ তদন্ত করে ২০০৭ সালের ২২ মে এনায়েত করিম ও এসএম নুরুল ইসলাম এবং বিডি ওয়েলডিংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ২০০৭ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে বিডি ওয়েলডিং ইলেকট্রোডের শেয়ারের বাজারদর ছয় দশমিক ৯০ টাকা থেকে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ৪২ দশমিক ৫০ টাকায় উন্নীত হয়। এ তিন মাসে শেয়ারটির দর শতকরা হিসেবে বেড়েছিল ৬১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যার পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মার্চ বিএসইসি শেয়ারটির দর অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ তদন্তে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। গঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন ওই সময়ের পরিচালক বর্তমানে নির্বাহী পরিচালক এটিএম তারিকুজ্জামান ও ওই সময়ের সহকারী পরিচালক তানিয়া শারমিন। বর্তমানে তিনি অন্যত্র কর্মরত রয়েছেন। অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধিতে এনায়েত করিম ও এসএম নুরুল ইসলামের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায় তদন্ত কমিটি।
উল্লেখ্য, গত আশির দশকে যাত্রা শুরু করেছিল রড উৎপাদনকারী বিডি ওয়েল্ডিং। গত দুই বছর (২০১৫ সালের শেষ দিকে) ধরে ক্রমেই কমছে এর উৎপাদন। একই সঙ্গে কমেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা। চট্টগ্রামে অবস্থিত কারখানার ২৪৯ ডেসিমেল জায়গা বিক্রি করেছে কোম্পানিটির পর্ষদ। রাজধানীর অদূরে ধামরাইয়ে কোম্পানিটির নতুন উৎপাদন কার্যক্রম চলমান বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ১৯৯১ সাল থেকে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন এসএম নুরুল ইসলাম। তার স্ত্রী ঝর্ণা ইয়াসমিন কোম্পানিটির মার্কেটিং পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, লোকসানের কারণে সময়মতো সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি কোম্পানিটি। এতে ঋণখেলাপি হিসেবে কোম্পানিটির নাম উঠেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) প্রতিবেদনে। তাই কোম্পানিটির ঋণের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যাংকঋণ সরবরাহ করতে পারছে না। গত ৩০ জুন, ২০১৬ সালে শেষ হওয়া অর্থবছরের এজিএমে কারখানার জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত পাস করানো হয়।