শেয়ার বিক্রি শুরু করেছে কারসাজিচক্র!

শেখ আবু তালেব: শেয়ার বিক্রি শুরু করেছেন মুন্নু জুট স্টাফলারসকে ঘিরে সক্রিয় কারসাজিচক্রের সদস্যরা। ৫০০ টাকার শেয়ারটি কারসাজি চক্র নিজেদের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় করে তিন হাজার ৬২৪ কোটি টাকার উপরে নিয়ে যায়। সূত্র জানিয়েছে, শেয়ারটির আরও কৃত্রিম চাহিদা তৈরির পরিকল্পনা ছিল কারসাজিচক্রটির। এক পর্যায়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাজার ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
ইতোমধ্যে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজি করে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এর ফলে মুন্নু জুট স্টাফলারসের শেয়ার কিনে লোকসান গুনতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। শেয়ার কারসাজি করে কারা এভাবে বিনিয়োগকারীদের সর্বস্বান্ত করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন তাদের খুঁজে বের করতে নিয়ন্ত্রক
সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
সূত্র জানায়, কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে চক্রান্ত ফাঁস হওয়ায় পতন শুরু হয়েছে শেয়ারদরে। ছয় কার্যদিবসে মুন্নু জুট স্টাফলারসের শেয়ারদর কমেছে ৫৮৩ টাকা। শুধু গতকালই কমেছে ১৩৬ টাকার ওপরে। সর্বশেষ শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে তিন হাজার ৪৯ টাকায়। ২ জুলাই সর্বশেষ তিন হাজার ১৫৮ টাকায় হাতবদল হওয়া শেয়ারটি গতকাল বিক্রি প্রস্তাব শুরু করেছিল তিন হাজার ১৮৫ টাকায়।
চক্রটি নিজেদের মধ্যে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে সর্বোচ্চ প্রস্তাবিত দর তিন হাজার ৩০৯ টাকা পর্যন্ত উঠিয়ে ছিল। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন ক্রেতা না পাওয়ায় শেয়ারদর কমতে শুরু করে। দিনশেষে কোম্পানিটির শেয়ারদর কমতে শুরু করে। ফলে সর্বশেষ তিন হাজার ৪৯ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয় শেয়ারটি। পাশাপাশি কমতে শুরু করেছে শেয়ারটির লেনদেন সংখ্যা।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ বেশকিছু সংকটে রুগ্ণ হয়ে স্বল্প মূলধনি মুন্নু জুট স্টাফলার্স। নতুন কোনো বিনিয়োগেও যাওয়ার সম্ভাবনা নেই কোম্পানিটির। শুধু কিছু পরিকল্পনার কথা বিভিন্ন মহলে ছড়িয়েছে কোম্পানির লোকজন। তাতেই ভর করে সম্প্রতি অস্বাভাবিক শেয়ারদর বেড়েছে। শেয়ারদর উল্লম্ফনের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে খোদ ওই গ্রুপের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অস্বাভাবিক শেয়ার লেনদেনের অভিযোগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গড়া তদন্ত কমিটি এরইমধ্যে একটি সিকিউরিটিজ হাউজকে চিহ্নিত করেছে। এরপর মুন্নু জুট স্টাফলার্সের দর বৃদ্ধির পেছনে গ্রুপটির কয়েকজন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
চরম অর্থ সংকটে থাকা কোম্পানিটি সর্বশেষ আর্থিক বছরে কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে মাত্র দুই লাখ টাকা। আর চলতি আর্থিক বছরের ৯ মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা মুনাফা দেখিয়েছে কোম্পানিটি। মুন্নু জুট স্টাফলার্সের আয়-মুনাফায় গতি ফেরেনি। তারপরও গত জানুয়ারি শুরু থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়তে থাকে।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি গত পাঁচ বছর ধরে নামমাত্র মুনাফা করছে। স্বল্প মূলধনি ওই কোম্পানিটির মোট মাত্র চার লাখ ৬০ হাজার শেয়ারের ৫৫ দশমিক ৯০ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। আর কারসাজির খবরে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর বর্তমানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে কোম্পানিটির ৩৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০