নামকরণের পেছনে রয়েছে লোকমুখে প্রচলিত নানা মিথ, রহস্য। এ পর্বে ‘খুলনা’ জেলার লোককথা গদ্যে সাজিয়েছেন
শরিফুল ইসলাম পলাশ: খুলনা একসময় আয়তনে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম ও লোকসংখ্যায় দশম স্থানে ছিল। সে সময় ‘খুলনা জেলা’ বলতে খুলনা সদর, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা মহকুমার সম্মিলিত অংশকে বোঝানো হতো। নদ-নদীসহ বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের আয়তন ছিল চার হাজার ৬৯৭ বর্গমাইল। প্রসঙ্গত, অবিভক্ত বাংলার প্রথম মহকুমা ছিল খুলনা।
১৮৮২ সালের ১ জুন খুলনা জেলা গঠন করা হয়। এ প্রসঙ্গে সে বছর ‘The Calcutta gazette ১৯ ও ২৬ এপ্রিল সংখ্যায় দুটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ হয়। ওই প্রজ্ঞাপন ব্রিটিশ সরকারের তরফ থেকে জারি করা হয়েছিল ১৪ ও ২৫ এপ্রিল। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী খুলনা জেলার জন্ম ১৮৮২ সালের ১ মে।
গল্পের শেষ নেই ‘খুলনা’ নামকরণ নিয়ে। এক সময় ওই অঞ্চল ছিল সুন্দরবনের ঘন জঙ্গলে ঢাকা। লোকালয়ের একেবারে শেষ প্রান্তকে বলা হতো ‘নয়াবাদ’ বা নতুন আবাদ। সদ্য বন কেটে বসবাস ও আবাদযোগ্য করার কারণে এমন নাম করা হয়েছিল। নয়াবাদ নামটি ইংরেজ শাসনামলেও বহাল ছিল।
সেকালেও মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করতে ও কাঠুরেরা কাঠ কাটতে সুন্দরবনে যেতেন। তবে সন্ধ্যার পর বনের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করতেন না কেউ। জনশ্রুতি আছে, সন্ধ্যাবেলা নয়াবাদের ঘাটে কোনো দুঃসাহসী মাঝি নোঙর তোলার জন্য রশিতে হাত দিলে বনের মধ্য থেকে বনদেবতা বলে উঠতেন, ‘খুলো না, খুলো না।’ পরে স্থানটি যখন বাসযোগ্য হয়, তখন নাম দেওয়া হয় ‘খুলনা’।
এছাড়া চণ্ডী কাব্য থেকে জানা যায়, বহুকাল আগে অজয় নদীর তটে ছিল উজানি বা উজ্জয়িনী নগর। সেই নগরে বাস করতেন ধনপতি সওদাগর। তিনি সপ্তডিঙা মধুকর সাজিয়ে বন্দরে বন্দরে বাণিজ্য করে বেড়াতেন। তার দুই স্ত্রী ছিলেন লহনা ও খুলনা। বড় স্ত্রী লহনা ছিলেন হিংসুটে আর ছোট স্ত্রী খুলনা ছিলেন পতিপরায়ণা। একবার ধনপতি বাণিজ্যে বের হন। সুযোগ পেয়ে লহনা তখন খুলনার ওপর অত্যাচার শুরু করেন। সওদাগর বাণিজ্য শেষে ফিরে এসে খুলনার ওপর লহনার অত্যাচারের কথা শোনেন। এতে ছোট স্ত্রী খুলনার প্রতি তার দরদ ও মুগ্ধতা আরও বেড়ে যায়। বর্তমান খুলনা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে কপোতাক্ষ নদের তীরে কপিলমুনি গ্রামে সওদাগরপতত্নী খুলনা কিছুদিন বসবাস করেছেন। ধনপতি তার স্ত্রী লহনা-খুলনার নাম স্মরণীয় করে রাখতে কপিলমুনি থেকে দক্ষিণ মুখে লহনা-খুলনা সড়ক সেতু নির্মাণ করেন। এছাড়া ভৈরব নদের দক্ষিণ পাড়ে খুলনেশ্বরী নামে চণ্ডীদেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। অন্য পাড়ে প্রতিষ্ঠা করেন লহনেশ্বরী মন্দির। এ
খুলনেশ্বরী থেকেই ‘খুলনা’ নামের উৎপত্তি হয় বলে মনে করেন অনেকে।
যে কারণেই নামকরণ হোক না কেন, হালের খুলনার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। সুন্দরবন এ জেলাকে অন্য জেলাগুলোর তুলনায় প্রাকৃতিকভাবে অনেক বেশি সমৃদ্ধশালী ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
Add Comment