শোয়ায় ব্যথা কমে

শোয়ার সময় কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে ঘাড়, কোমর ও পিঠের ব্যথা এড়িয়ে চলা যায়। সুতরাং এ বিষয়ে অবগত থাকা উচিত। জেনে নিন সঠিকভাবে শোয়ার সঠিক পদ্ধতি।
বিছানায় যাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করা ঠিক নয়। কেননা এতে শারীরিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। ফলে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত, যা সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। বিছানায় যাওয়ার সময় কখনই কোমর থেকে সামনে ঝুঁকে যাওয়া ঠিক নয়। তাড়াহুড়ো করে বা লাফিয়ে বিছানায় যাওয়ায় শিরদাঁড়ার কোনো অংশ ও পেশিতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তাই বিছানা থেকে ওঠার সময় একপাশে কাত হয়ে (যে পাশে কাত, তার উল্টো হাতে চাপ দিয়ে) আস্তে আস্তে উঠে পা ঝুলিয়ে রেখে কয়েক সেকেন্ড পর দু’হাত দিয়ে বিছানায় চাপ দিয়ে নেমে পড়লে পেশি বা জয়েন্টে চাপ কমানো যায়।
একপাশে কাত হয়ে শোয়া গেলে ভালো। ঘাড় যেন বিছানার সংস্পর্শে থাকে। পুরো দেহটা বিছানার সংস্পর্শে রাখতে হবে। দুই হাঁটুর মাঝখানে একটি নরম বালিশ দিলে আরাম অনুভূত হয়। এতে ঘুম ভালো হবে। ব্যথা থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে। কোমর ও বিছানার মাঝে ফাঁকা থাকলে নরম তোয়ালে ভাঁজ করে দিন। হিপ-পেলভিস-স্পাইন অর্থাৎ নিতম্ব-তলদেশ-মেরুদণ্ড একই সমান্তরাল থাকবে আর সাপোর্টও পাবে। এতে যেমন আরাম অনুভূত হবে, তেমনি ব্যথাও থাকবে না। পেশিও আরামদায়ক অবস্থায় থাকবে। যেদিকে কাত হয়ে শোবেন, সেদিকের কাঁধে চাপ না দিয়ে একটু সামনের দিকে কাঁধকে প্রসারিত করে রাখুন যেন শরীরের ভার সরাসরি কাঁধে না পড়ে।
হাঁটুকে বুকের কাছে ভাঁজ করে নিয়ে একপাশে কাত হয়ে (বাঁদিক হলে ভালো) শুয়ে থাকলে একদিকে যেমন আরাম পাওয়া যায়, তেমনই ঘুমও ভালো হয়। অনেকটা মায়ের গর্ভে যেমন অবস্থায় থাকে, ঠিক তেমন। অনেক সময় স্পাইনে দুটি ভার্টিব্রা বা কশেরুকার মাঝখানে যে ডিস্ক থাকে, তার মধ্যে চাপ বেড়ে গিয়ে ডিস্ক তার জায়গা থেকে সরে যায়। ফলে নার্ভ ফাইবারগুলোয় চাপ পড়ে ব্যথা অনুভূত হয়। এক্ষেত্রে সকালে ঘুম থেকে উঠলে পায়ের দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে। এই ভঙ্গিতে শুয়ে থাকলে স্পাইন বা শিরদাঁড়ার মধ্যে কিছুটা জায়গা তৈরি হয়। যার ফলে চাপ কমে গিয়ে আরাম অনুভূত হয় ও ঘুম ভালো হয়; এতে ব্যথাও থাকে না।
উপুড় হয়ে শোয়ার অভ্যেস আছে অনেকেরই। কিন্তু এভাবে শোয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে পেলভিস অর্থাৎ তলদেশ ও লোয়ার অ্যাবডোমেনের বা তলপেট বিছানার মধ্যে যেন ফাঁক না থাকে। প্রয়োজনে ফাঁকা স্থানে নরম বালিশ বা অন্য কিছু দিতে হবে। আরামদায়ক যেন মনে হয়। এতে মেরুদণ্ডের গঠন সঠিকভাবে একই লাইন ও সাপোর্টে থাকবে। ডি জেনারেটিক ডিস্কের সমস্যা থাকলে উপকৃত হবেন। এ ভঙ্গিতে ঘুমালে ডিস্কে যে প্রেশার তৈরি হয়, তা অনেকটা কমে যায়। ফলে ঘুম ভালো হয়।
চিত হয়ে শোয়ার সময় হাঁটুর নিচে একটি নরম বালিশ দিলে তা মেরুদণ্ডের পক্ষে ভালো। ঘাড়ের নিচেও একটি তোয়ালে ভাঁজ করে দিতে হবে। পারলে তোয়ালেকে বালিশের কভারের মধ্যে ঢুকিয়ে দিন, যাতে সরে না যায়। ফলে মেরুদণ্ড সোজা ও সমান্তরাল থাকবে। এভাবে শোয়ার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধাও আছে। যেমন এই ভঙ্গিতে শোয়ার ফলে শরীরের ওজন বা প্রেশার সারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সমভাবে ছড়িয়ে যায়। ফলে মেরুদণ্ডের বিভিন্ন ভার্টিব্রার ওপর চাপ কম পড়ে। ভার্টিব্রার মাঝে থাকা ডিস্কও আরাম পায়। ভার্টিব্রাগুলো সোজা থাকে ও পাশের পেশিগুলোও সতেজ থাকে। এর আশেপাশে যেসব অঙ্গ আছে, সেগুলোও প্রেশার ছাড়া থাকতে পারে। ফলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খুব আরামদায়ক মনে হবে। এভাবে শোয়ার ফলে কোনো পেশিই চাপে থাকে না।
স্পন্ডাইলোলিসথেসিস রোগীদের ক্ষেত্রে একটা ভার্টিব্রা আর একটা ভার্টিব্রার ওপর দিয়ে সিøপ করে চলে যায়। ফলে একটি গ্যাপ তৈরি হয় ও স্পাইনের ভার্টিব্রার অবস্থান পরিবর্তন হয়। রিক্লাইনিং পজিশনে ঘুমালে রোগীদের ক্ষেত্রে ভালো। ফলে বিছানাটা অনেকটা ইনক্লাইন্ড পজিশনে নিলে সুবিধা পাওয়া যায়। কারণ এটা ট্রাঙ্ক ও থাইয়ের মধ্যে অ্যাঙ্গেল তৈরি করে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ অনেকাংশেই কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০