Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 12:58 am

শ্বশুরালয়ে আইনজীবীর রহস্যজনক মৃত্যু পিতার দাবি হত্যাকাণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর কাঁঠালবাগানে একটি ৯ তলা ভবনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদের (৩৩) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। জিসাদের শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, তিনি ৯ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে জিসাদের বাবা সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম দাবি করেছেন, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কলাবাগান থানাধীন কাঁঠালবাগান ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ১৬৩ নম্বর বাসায় এ ঘটনা ঘটে। জিসাদের শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানান, বারান্দা থেকে ‘লাফিয়ে পড়ে’ আত্মহত্যা করেছেন।

তারা জানান, লাফিয়ে পড়ার পর জিসাদকে উদ্ধার করে প্রথমে গ্রিনলাইফ হাসপাতাল এবং পরে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র জানান, খবর পেয়ে আমরা বাসায় গিয়ে নিহতের বাবা-স্ত্রীসহ স্বজনদের বক্তব্য শুনি। স্ত্রীর ভাষ্য, ব্যারিস্টার আসিফ নিয়মিত বিয়ার সেবন করতেন। গত রাতেও খেয়েছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। আসিফ রাতে বারান্দায়ই বসা ছিলেন। শেষ রাতে ৯ তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন। ওসি বলেন, এ ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।

আসিফের শ্যালক সাইমন শাহিদ নিশাদ জানান, চার বছর আগে আসিফ তার বড় বোন সাবরিনা শাহিদ নিশিতাকে প্রেম করে বিয়ে করেন। তবে বিয়ের পর আসিফ কাঁঠালবাগানে শ্বশুরবাড়িতেই অধিকাংশ সময় থাকতেন। তাদের কোনো সন্তান নেই। আসিফের পরিবার থাকত মিরপুরে।

তবে জিসাদের বাবা সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম শেয়ার বিজকে জানান, আসিফের মৃত্যুটি রহস্যজনক। সে যদি আত্মহত্যা করে থাকে, তাহলে আত্মহত্যার জন্য কেউ না কেউ দায়ী। আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

শহিদুল ইসলাম জানান, গত এপ্রিল মাসে তার বড় ছেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে আরেক ছেলের মৃত্যু তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। জিসাদ নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।

আসিফের শ্বশুর ফেনী জেলার অতিরিক্ত পিপি শহীদুল্লাহ মজুমদার। গতকাল বিকালে আসিফের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়; সেখানে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে তার বাবা জানান।

শহিদুল ইসলাম আরও জানান, জিসাদ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তিনি মতিঝিলের দেশ ট্রেডিং করপোরেশনের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ছিলেন। তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনই ভোরে খবর দেয় আসিফের অবস্থা ভালো নয়, তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পরে সেখানে গিয়ে জিসাদকে মৃত দেখতে পাই। আমাদের সন্দেহ আসিফকে মেরে ফেলা হয়েছে। সে আত্মহত্যা করতে পারে না।’ তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। শহিদুল ইসলাম ১৯৮৬-৯০ মেয়াদে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

এদিকে জিসাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫-০৬ সেশনের ছাত্র ছিলেন। এ বিভাগে পড়ালেখা সম্পন্ন করে তিনি ব্যারিস্টারি পাস করে সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস করতেন। পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় তার সহপাঠীরা হতবাক। তারা কোনোভাবেই সহপাঠীর এমন অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। সহপাঠীদের একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ রাইসুল ইসলাম বলেন, জিসাদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগযোগ হতো। গত বুধবারও দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে। জিসাদ মানসিকভাবে অত্যন্ত দৃঢ়চেতা। তার আত্মহত্যার ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।