নিজস্ব প্রতিবেদক: বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর গভীর শোকাবহ পরিবেশে জাতি স্মরণ করছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শোক দিবসের শুরুতেই রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে লাখো মানুষ সমবেত হয়। দিনভর দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তারা এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন, দোয়া ও মোনাজাত করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যান বনানী কবরস্থানে। সেখানে তিনি ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার তার পরিবারের সদস্যদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। প্রধানমন্ত্রী তার মা, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রীসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। তাদের কবরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন তিনি। পরে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারাও বনানীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
বনানীতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন করতে হবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হবে এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে তিনি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় সশস্ত্র সালাম জানায়। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী সমাধি বেদির পাশে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন শেখ হাসিনা। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করেন। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেনও তার সঙ্গে ছিলেন।
এরপর জতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও চিফ হুইফ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সকাল ১১টায় সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু ভবনে বসে মিলাদ মাহফিলের মোনাজাতে অংশ নেন।
প্রতিবারের মতো প্রধানমন্ত্রী দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া ছাড়ার পর সমাধি প্রাঙ্গণ সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়। সর্বস্তরের মানুষ এরপর বঙ্গবন্ধুর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস দেশব্যাপী সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়সহ সব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। শোক দিসব উপলক্ষে আগের দিন (বুধবার) সন্ধ্যার পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাজতে থাকে। আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে পাড়া-মহল্লায় দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভোর থেকেই বুকে কালো ব্যাচ ধারণ করে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লা থেকে মানুষ আসেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে। সকাল ৭টার মধ্যে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। রাসেল স্কয়ার থেকে কালাবাগান, সোবহানবাগ, স্কয়ার হাসপাতাল পুরো এলাকায় লাখো জনতার ঢল নামে। সকালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্থানটি উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শাখা, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, ১৪ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, জাতীয় জাদুঘর, নজরুল ইনস্টিটিউট, শিশু একাডেমি, খেলাঘর, বাংলাদেশ বেতার, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, জাতীয় মহিলা সংস্থা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, জাতীয় গীতিকবি পরিষদ, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকচক্র সপরিবারে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:47 pm