শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মহান মে দিবস উপলক্ষে গতকাল দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে। খবর: বাসস।
দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। এ তহবিল থেকে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক যে কোনো খাতে নিয়োজিত কোনো শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে অথবা মৃত্যুবরণ করলে জরুরি চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ ও দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য এবং শ্রমিকদের সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্যও তারা আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। আমরা রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করেছি এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। সব সেক্টরে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মে দিবস বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। এই ঐতিহাসিক দিনে আমি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব মেহনতি মানুষকে শুভেচ্ছা জানাই। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে রক্তাক্ত আন্দোলনে শ্রমিকের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আত্মাহুতি দেয়া বীর শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা’ অত্যন্ত যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন শোষিত, বঞ্চিত ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৭২ সালে শ্রমনীতি প্রণয়ন করেন। তিনি পরিত্যক্ত কলকারখানা জাতীয়করণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রম কল্যাণ নিশ্চিতকরণে ‘জাতীয় শ্রমনীতি, ২০১২’ ও ‘বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা, ২০১৩’ এবং ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি, ২০১১’ প্রণয়ন করেছি। পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নে ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিল’ গঠন করা হয়েছে। শিল্প-কারখানায় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়েছে। শ্রমিক ও তাদের পরিবারের কল্যাণে বিভিন্ন সেবার সম্প্রসারণ ও জোরদারকরণে আমরা শ্রম পরিদপ্তরকে সম্প্রতি অধিদপ্তরে রূপান্তরিত করেছি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সারাদেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। এতে এক কোটির বেশি লোকের কর্মসংস্থান হবে। দেশি-বিদেশি সব বিনিয়োগকারী যত্রতত্র শিল্প স্থাপন না করে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী শ্রমিকদের জন্য শ্রমজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করা হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের সমান মজুরি নিশ্চিত করা হয়েছে এবং নারী শ্রমিকদের নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে এবং নারায়ণগঞ্জের বন্দরে দুটি বহুতল শ্রমজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলব।