শ্রমিক অভিবাসন প্রক্রিয়ায় দূর হোক সব অনিয়ম

দেশের শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় পাঁচটি ধাপে মোট ১৬ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি এখনও দালালনির্ভর। বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর ও মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশে যাওয়ার সময় পুরুষকর্মীদের ৯০ শতাংশই হন দুর্নীতির শিকার। শুধু ভিসা সংগ্রহ করতেই হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়। বিষয়গুলো তদারকির দায়িত্ব প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। সেখানেও উঠেছে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)

‘শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন: সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে গতকাল একাধিক জাতীয় দৈনিকে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

২০১৬ সালের মে থেকে এ বছর জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ, সাক্ষাৎকার, শ্রম অভিবাসন সংক্রান্ত আইন ও

নীতিমালা পর্যালোচনা, সরকারি-বেসরকারি তথ্য ও দলিল ঘেঁটে প্রতিবেদনটি তৈরি করে টিআইবি।

আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। তৈরি পোশাকশিল্প থেকে উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন হলেও সেখানে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আসে বিদেশ থেকেই। কিন্তু প্রবাসী শ্রমিকদের বদৌলতে যা আসে, তার প্রায় পুরোটাই পাই আমরা। তবু দীর্ঘদিন ধরে এ খাতে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছেই। গ্রামগঞ্জের বহু মানুষ রীতিমতো জায়গা-জমি বিক্রি করে আর্থিক সচ্ছলতার আশায় পাড়ি জমায় বিদেশে। সরকারি হিসাবে, এ বছরের প্রথম দুই মাসেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন এক লাখ ৬৬ হাজার ৪৭২ জন কর্মী। অতীতে বিদেশ যাওয়ার সঠিক প্রক্রিয়া জানা না থাকায় এবং দালালের খপ্পরে পড়ে তাদের অনেকেই সহায়-সম্পত্তি হারিয়েছেন। পুরো বিষয়টিতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও দুর্নীতি কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। জনবহুল এ দেশে চাহিদানুসারে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে মানুষকে বিদেশে পাঠালে যেমন জনসংখ্যার চাপ কমে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথটি আরও সুগম হয়। কিন্তু অভিবাসন প্রক্রিয়া জটিল ও ব্যয়বহুল হলে সে সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলোর উচিত সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসী আয় কমেছে আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ। এটি উদ্বেগজনক। প্রবাসী আয় এ হারে কমতে থাকলে হুমকির মুখে পড়তে পারে। শ্রমিক অভিবাসনের হার বৃদ্ধি পেলেও প্রবাসী আয় কেন কমছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। টিআইবির প্রতিবেদনটিতে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইন ২০১৩-এর কিছু আইনি ও প্রায়োগিক সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আইনের অনেক ধারা নির্দেশনামূলক হলেও বাধ্যতামূলক নয়। অন্যদিকে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসীর ক্ষতিপূরণের বাধ্যবাধকতা না রাখার বিষয়টিও উঠে এসেছে। আমরা আশা করব, জটিল এ প্রক্রিয়ায় দালালদের দৌরাত্ম্য রোধ, আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সরকারি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ অভিবাসী শ্রমিকদের সব ধরনের হয়রানি রোধে সরকার আশু পদক্ষেপ নেবে।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০