দেশের অর্থনীতির দ্বিতীয় প্রধান স্তম্ভ শিল্প খাত। দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৩৪ শতাংশ এ খাতের দখলে। আর দেশের প্রধানতম শিল্পাঞ্চল হচ্ছে ঢাকার আশুলিয়া ও গাজীপুর অঞ্চলে। কিন্তু বিগত কয়েকদিন ধরে এ অঞ্চলে চরম মাত্রায় শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজ করছে। বাধ্য হয়ে একের পর এক কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এভাবে চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতিতে অমানিশার অন্ধকার নেমে আসবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন কার্যক্রমের বিকল্প নেই। কিন্তু গত কয়েকদিনের অসন্তোষের কারণে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশের শিল্পায়ন খাতে চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। একদিকে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের চাপ, অন্যদিকে কারখানার আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটানোর দ্বিমুখী চাপের মধ্যে রয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাই যত দ্রুত সম্ভব কারখানাগুলো চালু করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘আবার শ্রমিক বিক্ষোভ: আশুলিয়ায় নতুন করে ৩২ কারখানায় ছুটি ঘোষণা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গত রোববার সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে কয়েকটি কারখানার ভেতরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা আবার বিক্ষোভ করেছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ‘বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে’ অন্তত ৩২টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এভাবে কারখানা বন্ধ হতে থাকলে দেশের রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দেশের প্রধান রপ্তানি খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। আর অধিকাংশ পোশাক কারখানা এই আশুলিয়া এলাকাকেন্দ্রিক। কাজেই এ অঞ্চলে যদি শ্রমিক অসন্তোষ দানা বাধে তাহলে পুরো রপ্তানি খাতই চ্যালেঞ্জে পড়বে। কাজেই শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন করে শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই।
জানা যাচ্ছে যে, নানা স্বার্থন্বেষী মহল শ্রমকিদের উসকানি দিচ্ছে। যদি এমন কোনো কিছু ঘটে থাকে তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা একান্ত আবশ্যক। আর এ ধরনের সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা। সরকারকে উদ্যোগী হয়ে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তারা শ্রমিক-মালিকসহ অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি ভালো সমাধান খুঁজে বের করতে পারেন। মোট কথা যে কোনো উপায়েই হোক শ্রম অসন্তোষ রোধকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে উদ্যোগী হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।