Print Date & Time : 28 June 2025 Saturday 5:33 pm

শ্রমিক সংকটে দিশাহারা রংপুর ও সাতক্ষীরার বোরোচাষি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রংপুরের বদরগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় শ্রমিক সংকটে পাকা বোরো কাটতে পারছেন না কৃষক। বদরগঞ্জে অতি বর্ষণে নিচু এলাকার ধান তলিয়ে গেছে আবার অনেক ক্ষেতের ধান পানিতে ন্যুয়ে পড়েছে। প্রতিটি জমির ধান কাটার উপযুক্ত হলেও কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা তা কাটতে পারছেন না। রংপুর প্রতিনিধি নুর আলম ও সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ফারুক রহমান জানাচ্ছেন বিস্তারিত :
রংপুর : বদরগঞ্জে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ধান পাকলেও শ্রমিক সংকটে কাটতে পারছেন না কৃষক। এদিকে নিচু এলাকায় অনেক ক্ষেতের ধান পানিতে তলিয়ে গেছে আবার অনেক ক্ষেতের ধান তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অথচ কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে কাটতে পারছেন না কৃষক।
উপজেলার গোপিনাথপুর ইউপির বোর্ডেরহাট এলাকার কৃষক সাহাবুল ইসলাম জানান, কয়দিন আগে শিলাবৃষ্টিতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তার ওপর বেশি মজুরি দিয়েও ধান কাটার জন্য মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না। পাকা ধান নিয়ে খুব সমস্যায় আছেন তারা।
রামনাথপুর ইউনিয়নের কিসমত ঘাটাবিল এলাকার কৃষক এমারুল হক জানান, অতি বর্ষণে পাকা ধান তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছেন না তারা। এদিকে বিঘা প্রতি আবাদ করতে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকারও বেশি। শ্রমিক সংকটের কারণে এখন এক বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। অথচ ধানের মণ ৫০০ টাকা।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনক রায় জানান, উপজেলায় ১৭ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। অর্জিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক জমির ধান কাটা সম্পন্ন হলেও মজুর সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধান কাটা বিলম্বিত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবর রহমান জানান, দেশের নানা প্রান্তে আগাম ধান কাটা শুরু হওয়ায় শ্রমিক সংকট চলছে। এ ছাড়াও অনেক কৃষি শ্রমিক এখন কৃষির সঙ্গে সংযুক্ত নয়। তারা ভ্যান, অটোরিকশা, চার্জার ভ্যানসহ অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত। তারা এখন আর রোদে পুড়ে ধান কাটতে চায় না। এটাও কৃষি শ্রমিক সংকটের অন্যতম কারণ।
সাতক্ষীরা: চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও বিচালির (ধানের মরা গাছ) দাম চড়া থাকায় সাতক্ষীরার বোরো চাষিরা লাভের মুখ দেখলেও ধান কাটা শ্রমিক সংকটের কারণে দিশাহারা হয়ে পড়েছে। সময়মতো পাকা ধান ঘরে তুলতে না পেরে অনেকে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। জেলার বাইরে থেকেও শ্রমিক সংগ্রহ করতে না পেরে অনেক কৃষক বেকায়দায় পড়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তিন লাখ ৬২৬ টন। এর মধ্যে সদরে ৯৭ হাজার ৫১৭ টন, কলারোয়ায় ৪৮ হাজার ৪৮৫ টন, তালায় ৭৩ হাজার ৭৮ টন, দেবহাটায় ২৫ হাজার ১৮৯ টন, কালিগঞ্জে ২১ হাজার ৭৯৬ টন, অশাশুনিতে ২৭ হাজার ৫৪৪ টন এবং শ্যামনগরে ছয় হাজার ৭১৭ টন। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে এখনো ৩০-৪০ শতাংশ জমিতে ধান রয়েছে।
কৃষক ও কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে কৃষিশ্রমিক সংকটের পেছনে রয়েছে পেশা পরিবর্তন। মৌসুমি কাজের ভরসা না পেয়ে মানুষ অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই পেশা পরিবর্তনের কারণে এবার ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক।
সদরের কুখরালি এলাকার মাঠে দেখা যায় কৃষক সিরাজুল তার মা, বাবা, ছোটভাই, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ধান মাড়াই করছেন। সিরাজুল জানান, শ্রমিক সংকট ও শ্রমমূল্য অনেক বেশি হওয়ায় পরিবারের সবাই মিলে ধান ঘরে তোলার কাজ করছেন।
তালা উপজেলার বাগমার গ্রামের কৃষক আবদুল আহাদ জানান, এক বিঘা জমি আবাদ করতে ছয় থেকে আট হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন ধান কাটার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিকদের একটি অংশ স্বাবলম্বী, আর কেউ কেউ শহরে গিয়ে কাজ করছে। যারা আছেন, তারা ধান কাটার জন্য চড়া দাম হাঁকছেন। কাছের জমি বিঘাপ্রতি চার ও দূরে হলে সাড়ে চার হাজার টাকা চাইছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কাজী মো. আবদুল মান্নান জানান, এ বছর জেলায় ৭৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন হাজার হেক্টর বেশি। কিন্তু শ্রমিক সংকটে ধান তুলতে সমস্যা হচ্ছে।