নিজস্ব প্রতিবেদক: শ্রম আইনের বিধান না মানায় গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এবার ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক রহিবুল ইসলামের আদালতে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) তরিকুল ইসলাম এ মামলা করেন। শ্রম আদালতের পেশকার মিয়া মো. জামাল উদ্দিন বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় ড. ইউনূস ছাড়াও গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজনীন সুলতানা, পরিচালক আ. হাই খান ও উপমহাব্যবস্থাপক (জিএম) গৌরি শংকরকে বিবাদী করা হয়েছে। ১২ জানুয়ারি মামলার বিষয়ে আদেশ দেবেন আদালত।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মামলার বাদী ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে ১০টি বিধি লঙ্ঘনের বিষয় দেখতে পান। গত বছরের ৩০ এপ্রিল কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এক পরিদর্শক প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে ত্রুটিগুলো সংশোধনের নির্দেশনা দেন।
এরপর গত বছরের ৭ মে ডাকযোগে এ বিষয়ে জবাব দেয় গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স। তবে ‘জবাব সন্তোষজনক হয়নি’ উল্লেখ করে ওই বছরের ২৮ অক্টোবর সরকারি ওই অধিদপ্তরের বর্তমান পরিদর্শক আবারও গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সকে অবহিত করে। তারপরও প্রতিষ্ঠানটি ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করে ফের সময়ের আবেদন করে। তবে আবেদনের সময় অনুযায়ী তারা জবাব না দেওয়ায় ‘বিবাদীরা শ্রম আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন’ বলেও ওই মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
শ্রম আইন না মানার অভিযোগের মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স বিধি মোতাবেক শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বই দেয় না, শ্রমিকের কাজের সময়ের নোটিসে পরিদর্শকের কাছে অনুমোদন না নেওয়া, কোম্পানিটির বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক রিটার্ন জমা না দেওয়া, কর্মীদের বছরান্তে অর্জিত ছুটির অর্ধেক নগদায়ন না করা, কোম্পানির নিয়োগবিধি মহাপরিদর্শকের কাছ থেকে অনুমোদিত না হওয়া, ক্ষতিপূরণমূলক সাপ্তাহিক ছুটি ও উৎসব ছুটি-সংক্রান্ত কোনো রেকর্ড-রেজিস্টার সংরক্ষণ না করা, কোম্পানির মুনাফার অংশ পাঁচ শতাংশ শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিল গঠনসহ লভ্যাংশ বণ্টন না করা, সেফটি কমিটি গঠন না করা, কর্মীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করালেও কোনো ঠিকাদারি লাইসেন্স না নেওয়া এবং কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স না নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের কারণে গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের চাকরিচ্যুত তিন কর্মীর পৃথক তিনটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে একই আদালত গত বছরের ৯ অক্টোবর ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। পর ৩ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাকিয়া পারভীনের আদালত থেকে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন তিনি।