হলুদে হলুদে ছেয়ে গেছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার সরষের ক্ষেত। ক্ষেতের পাশে বসানো হয়েছে মধু সংগ্রহের বাক্স। মধু সংগ্রহের কারণে সরষের ফলন বেশি হয়।
এখানকার খাঁটি মধু দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়, রফতানিও করা হয়। এতে লাভবান হচ্ছেন মধু সংগ্রহকারী চাষিরা। কারণ এই মধু সংগ্রহ করে বিক্রির মাধ্যমে চাষিদের ভাগ্য বদলে গেছে।
নবজাতক শিশু ও বৃদ্ধদের ঠাণ্ডাজনিত রোগের ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহার করতে দেখা যায়। এ কারণে শহর ও শহরতলিসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এর চাহিদা অনেক।
শ্রীনগর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে দিগন্তবিস্তৃত মাঠজুড়ে এবার আবাদ হয়েছে সরষে।
মৌচাষিরা সরষে ক্ষেতের পাশে মৌমাছির সাহায্যে মধু সংগ্রহের জন্য কৃত্রিম পদ্ধতিতে চাকের বাক্স ফেলে রাখেন। সেই বাক্সে ১৫ থেকে ২০টি পর্যন্ত মোম দিয়ে চাকের ফ্রেম রাখা হয়। প্রথমে বাক্সে একটি-দুটি রানি মৌমাছি রাখা হয়। রানি মৌমাছির কারণে সরষে ক্ষেতের পাশে চাকের বাক্স যেখানেই রাখা হোক না কেন ওই বাক্সে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মৌমাছি ঝাঁক বেঁধে আসতে থাকে। চাকের বাক্সের মধ্যখানের নিচে ছিদ্র করে রাখা হয়। সে পথ দিয়ে মৌমাছি আসা-যাওয়া করতে থাকে। জমি থেকে মধু সংগ্রহের পর মৌমাছি চাকের বাক্সে আসে। সরষে ফুল থেকে মৌমাছিরা নেকটার (পাতলা আবরণ) চাকের বাক্সে নিয়ে আসে।
মৌমাছির তাপ ও বাতাসের মাধ্যমে ছয় থেকে সাত দিন পর তা গাঢ় হয়ে মধুতে পরিণত হয়। এরপর মধুচাষিরা চাকের বাক্স খুলে চাকের ফ্রেম থেকে সাত থেকে আট দিন পরপর মেশিনের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করেন। এবার সরষেয় ফুল ভালো ধরেছে। ফুল বাড়ার কারণে মধুও বেশি পাওয়ার আশা করছেন তারা। যতদিন পর্যন্ত সরষে ফুল থাকবে, ততদিন পর্যন্ত তারা সাতগাঁও থেকে মধু সংগ্রহ করবেন চাষিরা।
মৌচাষ প্রকল্পের এক পরিচালক বেলায়েত হোসেন জানালেন, তারা বংশপরম্পরায় মধু উৎপাদন করে আসছেন। তার বাবা মতি মিয়া ১৯৬২ সালে ভারতের হিমালয় উত্তর প্রদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে মৌচাষ শুরু করেন। তিনি এই ব্যবসা শুরু করে বেশ ভালো আছেন।
মৌচাষ প্রকল্পের আরেক পরিচালক
মো. পাবেল হোসেন জানান, তারা সারা বছরই মধু সরবরাহ করে থাকেন বিভিন্ন জেলায়। তিনিও বাবার কাছ থেকে মধুচাষ শিখেছেন। বিদেশি প্রজাতির মৌমাছি আসায় সরষে ক্ষেতে ভালো মধু পাওয়া যাচ্ছে। সাত দিন পরপর ১২ থেকে ১৩ মণ মধু সংগ্রহ করছেন। দামও মিলছে বেশ।
উপজেলা কৃষি অফিসার কল্যাণ কুমার সরকার জানান, মৌমাছি চাষ প্রকল্প দেখে যুবকরা আগ্রহী হচ্ছেন। তারাও সরষে চাষ করে মধু সংগ্রহে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তিনি আরও জানান, এ বছর জেলার তিন হাজার পাঁচ হেক্টর জমিতে সরষে চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীনগর উপজেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে সরষে চাষ হয়েছে। গত বছর জেলা থেকে পাঁচ মেট্রিক টন অর্থাৎ ২০ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ করা হয়েছিল। এ বছর বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদের এগিয়ে আসার আহ্বান করেছেন এ কৃষি কর্মকর্তা। মৌচাষ প্রকল্পের পরিচালক ও কর্মচারীরা জানালেন, সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও বেশি মধু সংগ্রহ করা সম্ভব।
শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ