Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 10:33 pm

শ্রীপুরে চার বছরেও চালু হয়নি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়

প্রতিনিধি, শ্রীপুর (গাজীপুর): গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১৭ সালে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে পৌর এলাকার বৈরাগীরচালা গ্রামে ‘নবধারা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’ গড়ে তোলা হয়।

সরকারিভাবে এমন উদ্যোগ নেয়ায় তৎকালীন প্রশাসনকে সরকারের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়। সরকারের মতো সাধারণ মানুষেরও আশা ছিল উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ তৈরি হবে এ বিদ্যালয় নির্মাণের মাধ্যমে।

তবে প্রশাসনের অবহেলায় এখন বিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ। সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে সরকারি অর্থ খরচ করে গড়ে তোলা এ বিদ্যালয়ের অবকাঠামো।

বিদ্যালয়সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, উপজেলায় প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়ার সুযোগ না থাকায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। স্থানীয় মনিরুজ্জামান খান বিদ্যালয়ের জন্য ১৭ শতাংশ জমিও দান করেন। পরে উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়। ইটের দেয়ালঘেরা ও টিনের ছাউনি দিয়ে একটি হলরুম, চারটি শ্রেণিকক্ষ ও একটি অফিসকক্ষ তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যালয় মাঠের এক কোণে সুপেয় পানির জন্য স্থাপন করা হয়েছিল সাবমারসিবল ওয়াটার পাম্প, অরক্ষিত থাকায় যা চুরি হয়ে যায় গত বছর। এ বিদ্যালয়ের অনুকূলে বেশ কয়েকবার উপজেলা সমাজসেবা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে বরাদ্দও হয়েছিল। তবে কার্যক্রম না থাকায় সবই এখন অপ্রয়োজনীয়।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রথম অবস্থায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এনে ভর্তি করা হয়েছিল এ বিদ্যালয়ে। কাগজ-কলমে ২৫০ শিক্ষার্থী ও ১৫ শিক্ষক ছিলেন, যদিও বাস্তবে কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসেনি। তবে উপজেলা প্রশাসন যেদিন বিদ্যালয়টিতে প্রোগ্রাম করত, সেদিন তারা বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ফটোশেসন করত। এভাবে প্রশাসন কর্তৃক পুরস্কৃত হওয়ার পর আর কোনো খোঁজ নেয়নি তারা।

এখন বিদ্যালয়ের মাঠ ঘন ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে। হলরুমটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে অন্য একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান এক গৃহশিক্ষক।

স্থানীয়রা জানান, উদ্বোধন করা হলেও মূলত বিদ্যালয়টি চালুই হয়নি কখনও। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শুধুই অর্থের অপচয় হয়েছে। রাতে বিদ্যালয়ে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমাতুজ জহুরা বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাদের বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করার কথা বলে জমি দিতে বলে। আমরা জমিও দিই। তবে তারা শুধু অবকাঠামো তৈরি করেই ক্ষান্ত হয়ে যায়। এরপর আর খোঁজ নেয়নি কেউ। তৎকালীন প্রশাসন এ বিদ্যালয় দেখিয়ে পুরস্কৃত হয়। আর আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তিনি এখন পুরো পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। অন্য শিক্ষকদেরও কোনো খবর নেই।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, অনেকটা আশা নিয়ে এ বিদ্যালয়টি গড়ে তোলা হয়েছিল। অন্তত আমাদের আশা ছিল, এখানে প্রতিবন্ধীরা শিক্ষার সুযোগ পাবে। প্রতিবছর আমরা বই ও শিক্ষা উপকরণ দিয়েছি তাদের। তবে শিক্ষা কার্যক্রম ও শিক্ষার্থী না থাকাটা সত্যিই হতাশাজনক। কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও তা চালু করতে পারিনি।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, তিনি এ বিদ্যালয় সম্পর্কে এখনও অবগত নন। তবে খোঁজ নিয়ে বিদ্যালয়টি যাতে চালু করা যায়, সে ব্যবস্থা নেবেন।