প্রতিনিধি, শ্রীপুর (গাজীপুর): দুই-তিন দিন ধরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। পানির নিচে জমির বোরো ধান পেকে প্রায় পচন ধরেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। সরেজমিনে শ্রীপুর পৌর এলাকার লোহাগাছ গ্রামের কৃষক রুহুল আমিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিক সংকটে তার পাকা ধান জমিতেই পড়ে আছে। অনেক খুঁজেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি অনেক বেশি। প্রায় দেড় থেকে দুই মণ ধানের দাম একজন শ্রমিকের এক দিনের মজুরির সমান। ফলে থমকে আছে ঘরে ধান ওঠানোর কাজ।
গতকাল সকালে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা শ্রমিক হাটে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা বাবদ ছয় থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত হাঁকানো হয় বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। সেখানে দিনচুক্তি একজন শ্রমিকের মজুরি চাওয়া হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।
উপজেলার তেলিহাটি, টেংরা, সাইটালিয়া, বাঁশবাড়ি, গাজীপুর, মাওনা, কাওরাইদ, বরমীসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। পানির নিচে জমিতে ধান পরিপক্ব হয়ে গেলেও শ্রমিক সংকটে তা ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষক। শ্রমিক সংকটের কারণ হিসেবে জানা যায়, ধান কাটা ও লাগানোর কাজ হয় শুধু মৌসুম এলেই। কিন্তু বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবিকার তাগিদে শ্রমিকরা ভিন্ন ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউ অটোচালক হয়েছেন, কেউ পোশাক শ্রমিক, কেউ বা মাসিক চুক্তিতে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। ফলে ধান কাটার জন্য শ্রমিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। তাই মৌসুম এলে এমন সংকটে পড়তে হয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ বছর শ্রীপুর উপজেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৬৫০ হেক্টর, যা পুরোপুরি অর্জিত হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় এখন পর্যন্ত পাকা ধানের ২৫ শতাংশ কর্তন হয়েছে, যার প্রতি হেক্টরে সাড়ে তিন মেট্রিক টন করে ফলন হয়েছে।
ধান চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতেই ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সেচ কাজে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার সব ধরনের সার ও কীটনাশকের দামও বেড়েছে কয়েক দফায়। এমন পরিস্থিতিতে ধান চাষে খরচ হচ্ছে আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এরই মধ্যে ধানে ব্লাস্ট রোগের ফলে উৎপাদনও কমে গেছে। তারা আরও বলেন, বর্তমানে ধানের মণ ৭৫০-৮২০ টাকা, যা একজন কৃষি শ্রমিকের এক দিনের মজুরির চেয়ে কম। এক বিঘা জমির সর্বোচ্চ ১৪ মণ ধান কাটতে প্রয়োজন আট শ্রমিক। তার পরেও যদি শ্রমিক পাওয়া যেত তাহলেও স্বস্তি পাওয়া যেত।
বর্গাচাষি জাহাঙ্গীর আলম এবার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছেন। তার প্রায় সব জমির ধানই পেকে গেছে। হাঁটে কয়েকবার গিয়েও তিনি পাচ্ছেন না শ্রমিক।
কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, কয়েক দিন আগেও ৬০০ টাকায় শ্রমিক মিললেও এখন আর ওই মজুরিতে তারা কাজ করতে চাচ্ছেন না। প্রায় সব কৃষকের ধান কাটার কাজ শুরু হয়ে যাওয়ায় জনপ্রতি শ্রমিকের মজুরি দাঁড়িয়েছে খাবারসহ এক হাজার ২০০ টাকা।
কৃষিশ্রমিকরা বলছেন, এক লিটার তেল কিনতে ২২০ টাকা লাগে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সবকিছুর দাম বেড়েছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা। তাই দৈনিক মজুরি এক হাজার টাকা না হলে কাজ করেও লাভ নেই।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইমতিয়াজ জাহান খান বলেন, এ উপজেলায় শিল্পায়নের প্রসারে শ্রমজীবী মানুষেরা দিনকে দিন কলকারখানায় নিয়োজিত হচ্ছে। ফলে কৃষিতে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। এছাড়া উত্তারাঞ্চলের ধান কাটার কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনগুলোও এখন হাওর এলাকায় থাকায় সেখানে শ্রমিকরা বেশি ব্যস্ত। এজন্যই সাময়িকভাবে ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে।