শ্রীমঙ্গলে অর্থ বছরের ১৩ তম চা নিলাম অনুষ্ঠিত

প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্রে চলতি অর্থ বছরের ১৩ তম চা নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের চা নিলামে এম আর খাঁন চা বাগানের চা পাতা সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়। যার প্রতি কেজি বাজার মূল্য ছিল ২৭২ টাকা। এদিকে সাবারি টি প্লান্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের গ্রীনটি সেটিও সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়। যার প্রতি কেজি বিক্রয় মূল্য ছিল ১ হাজার ১৮০ টাকা।

আজ বুধবার (২৬ শে অক্টোবর) শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রের অস্থায়ী অফিস জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামের হলরুমে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। তবে, চট্টগ্রামের বড় বড় বায়াররা এ নিলামে অংশগ্রহণ করেনি। এদিকে ক্রেতারা জানিয়েছেন, ব্রোকারসদের সিন্ডিকেটের কারণে অনেকে এ নিলাম থেকে চা পাতা কিনছেন না এবং এ নিলামে অনেকে আসতে চায় না।

জানা যায়, শ্রীমঙ্গলের ৪ টি ব্রোকারস হাউস মিলিয়ে প্রায় ৩৫ জন বায়ার নিলামে অংশগ্রহণ করেন। এতে ৯১ হাজার ৬০৪ দশমিক ১০ কেজি চা পাতা নিলামে ওঠে, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ১ কোটি তিরাশি লাখ ২০ হাজার ৮২০ টাকা। এর আগে গত ১২ অক্টোবর নিলামে ২ লক্ষ তেষট্টি হাজার ৫৩৫ দশমিক ৯০ কেজি চা পাতা নিলামে ওঠে, যার বাজারমূল্য ছিল আনুমানিক ৫ কোটি ২৭ লক্ষ ৭ হাজার ১৮০ টাকা।

শ্রীমঙ্গল টি ব্রোকার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হেলাল আহমদ শেয়ার বিজকে জানান, ‘প্রায় ৯১ হাজার চা অপারিং হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকার উপরে। আজকের এই নিলামে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়েছে এম আর খাঁন চা বাগানের ব্ল্যাক টি ২৭২ টাকা, শ্রীমঙ্গলের মাস্টার টি এটি ক্রয় করছেন। আর সাবারি টি প্লান্টেশন এর গ্রীণ টি সর্বোচ্চ দামে ১ হাজার ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। চায়ের কোয়ালিটি বাড়তেছে বিধায় চায়ের মূল্য বাড়ছে। আশা করছি এভাবে চায়ের কোয়ালিটি থাকলে চায়ের বাজার আরও বাড়বে।’

মাস্টার টি সাপ্লাই এর স্বত্বাধিকারী মো. শরিফুল ইসলাম বুলবুল শেয়ার বিজকে জানান, ‘এই নিলামে ভালো চা বাগানের চা পাতার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন বাগানের চা বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়। যেমন ২২০ টাকা, ২৫০ টাকা, ২৬০ টাকাসহ এরকম বিভিন্ন দাম ব্রোকারস হাউসগুলো করেছে।’

শ্রীমঙ্গল ব্রোকারস-এর টি স্টাফ মো. শফিকুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে যে রেজাল্টটা আসছে, তাতে এখন পর্যন্ত ভালো বাগানের কোন ভালো চা পাতা আসে নাই। হয়তো বাগানের ব্যবস্থাপকরা যদি তাঁদের যথাযথ ভূমিকা পালন করে তাহলে হয়তো আগামী কিছুদিনের ভিতর ভালো চা পাব। ভালো চা বাজারে সবসময় ভালো দাম থাকে। এখন যেহেতু বাজারে ভালো চা খুবই কম তার চাহিদাটা অনেক বেশী এবং তার দামটা ও অনেক বেশী।’

তিনি আরও বলন, ‘বর্তমানে চায়ের কোয়ালিটি ও কালার ঠিক থাকছে না। ব্রাউন হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু আমাদের এখানে পঞ্চগড়ের চা আসে, তার দামও কম। এই সপ্তাহে পঞ্চগড়-এর চা পাতার দামটা মোটামুটি অনেক কম। ১২০ থেকে ১৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত চা বিক্রি হচ্ছে। আর ভালো দামের চা হচ্ছে বিশেষ করে মধু পুর, কেদার পুর, গাজীপুর, বালিশিরা, রাজঘাট তাঁদের চা পাতা খুব ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। তাঁদের চায়ের গুনগত মান অনেক ভালো। ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ ও ৩১০ টাকা পর্যন্ত বর্তমানে ভালো চায়ের দাম রয়েছে।’

এদিকে বাংলাদেশ চা বোর্ড এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘দেশের চা-শিল্পে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৪ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন কেজি অর্থাৎ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। যা অতীতের যে কোনো মাসের উৎপাদন রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।

গত বছর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের তুলনায় এ বছরের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় ১৭ শতাংশ চা উৎপাদন বেশি হয়েছে। এর আগে মাস ভিত্তিক উৎপাদনের সর্বশেষ রেকর্ড হয়েছিলো গত বছরের ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে। গত অক্টোবরে ২০২১ সালে ১৪ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন কেজি অর্থাৎ ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিলো।

জানা যায়, ‘২০২২-২৩ অর্থ বছরে শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রে মোট ২৩ দিন চা নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ১৭টি এবং আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ৬টি নিলাম হবে। চায়ের সিংহভাগ উৎপাদিত হয় মৌলভীবাজার জেলায়। এখানে অধিকাংশ চা কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও চা বিক্রির জন্য অনুমোদিত পাঁচটি ব্রোকার্স হাউস ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জড়িত রয়েছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০