রুপম আচার্য্য, মৌলভীবাজার: চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে ১০ম বারের মতো চায়ের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রের অস্থায়ী অফিস জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামের হলরুমে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। তবে চট্টগ্রামের বায়াররা না আসায় হুমকিতে পড়ে শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্রটি।
জানা যায়, নিলামে শ্রীমঙ্গলের পাঁচটি ব্রোকারস হাউস এবং প্রায় ৪০ বায়ার অংশগ্রহণ করেন। এতে ৮৫ হাজার ৭৪৭ কেজি চা পাতা নিলামে ওঠে, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ১৪ কোটি পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। কিন্তু ৮৫ হাজার ৭৪৭ কেজি চা পাতা নিলামে উঠলেও ভালো কোয়ালিটি না থাকায় বিক্রি হয় প্রায় ৪০ হাজার কেজি চা পাতা, যার বাজারমূল্য ছয় কোটি ৮০ লাখ টাকা।
এর আগে গত ২৪ আগস্ট এক লাখ ১১ হাজার ৩৫০ দশমিক ৪ কেজি চা পাতা নিলামে ওঠে। এর আগে গত ১০ আগস্ট দুই লাখ চার হাজার ৪৫০ কেজি পাতা নিলামে ওঠে এবং বিক্রি হয় ৮০ হাজার ২৫০ কেজি চা, যার বাজারমূল্য ছিল এক কোটি ৩৫ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা। তবে গতকালের নিলামে বড় গ্রুপের মধ্যে সিটি গ্রুপ ছাড়া অংশগ্রহণ করছেন বড় বায়াররা। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, শিগগিরই সব বাগান এতে অংশগ্রহণ করবে। এখানে নিলামে অংশগ্রহণ করলে সময় ও খরচ দুটিই বাঁচবে।
চট্টগ্রামের বায়াররা না আশায় হুমকির মুখে শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্রটি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বায়াররা শুরু থেকে আসছেন না এখানে। বায়াররা এলে মার্কেটটাও পুরিপূর্ণ হতো। এখানে ৯২টি বাগান থাকলেও সেরকম অকশনে অংশ নিচ্ছে না বাগানগুলো। ভালো বাগানগুলো না এলে সমস্যাই থেকে যাবে বলে জানান চা বাগান-সংশ্লিষ্ট মানুষ ও বায়াররা। নিলামে ৮৫ হাজার কেজির ওপরে চা নিলামে উঠেছে, যার অর্ধেক বিক্রি হবে বলে আশাবাদী ব্রোকাররা। তারা বলছেন, বড় কোম্পানির মধ্যে সিটি গ্রুপ এলেও অন্যরা এখনও আসেনি।
এদিকে দেশে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়, যা ছিল ৯৬ দশমিক ৫১ মিলিয়ন কেজি। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০০ মিলিয়ন কেজি। চায়ের সিংহভাগ উৎপাদিত হয় মৌলভীবাজার জেলায়। এখানে অধিকাংশ চা কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও চা বিক্রির জন্য অনুমোদিত পাঁচটি ব্রোকার্স হাউস ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জড়িত রয়েছেন।
শ্রীমঙ্গল টি ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএমএন ইসলাম (সৈয়দ মুনির) বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলের এ অকশন হাউসটি যেহেতু প্রাইমারি স্টেজে আছে, তাই আমরা আশাবাদী ভবিষ্যতে এই নিলাম কেন্দ্রটি বাংলাদেশের সেরা নিলাম কেন্দ্র হবে। যেহেতু আপনারা জানেন, বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশের উপরে চা প্রডিউস হয় আমাদের এ গ্রেটার সিলেটে। মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেটসহ ৭৪টি বাগানই এ অঞ্চলে। তবে আমরা আশাবাদী এ অকশনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চা প্রস্তাব হবে। আগামী পাঁচ বছরের ভেতরে আমাদের নিলাম কেন্দ্রটি বাংলাদেশের সেরা নিলাম কেন্দ্রে পরিণত হবে।
শ্রীমঙ্গলস্থ টি ট্রেডার্স অ্যান্ড প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সদস্য সচিব জহর তরফদার জানান, ‘জেলার ৪০টিরও বেশি চা বাগানের পাতা নিলাম হচ্ছে। বিশেষভাবে বড় গ্রুপের মধ্যে সিটি গ্রুপ এখানে চা পাতা দিচ্ছে। এছাড়া ইস্পাহানি, ফিনলে, ডানকান, সাতগাঁও চা, এনটিসিÑতাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, তারা যেনো তাদের চা পাতা শ্রীমঙ্গলের এ নিলাম কেন্দ্রে ব্রোকারস হাউসের মাধ্যমে প্রস্তাবের ব্যবস্থা করেন।’
জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রে ২৩টি চা নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছর ২০২২ সালে ১৭টি এবং ২০২৩ সালে ছয়টি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, ‘মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে নিলাম ডাকের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চায়ের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্র যাত্রা করে ২০১৮ সালের ১৪ মে। পাঁচ বছর ধরে চলছে নিলাম কেন্দ্রটি। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে চলমান চা নিলাম কেন্দ্রটি রয়েছে নানা সমস্যায়।’