প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্রে ২০২৩-২৪ নিলাম বর্ষের প্রথম চা নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিলামে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি চা বাগানের নতুন পাতা উঠানো হয়। নিলামে সাবারি টি প্ল্যান্টেশন এর গ্রীনটি সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়েছে। যার প্রতি কেজি দাম ছিল ১ হাজার ৯৫০ টাকা।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রের অস্থায়ী কার্যালয় জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়।
শ্রীমঙ্গলের পাঁচটি ব্রোকারস হাউস মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন বায়ার নিলামে অংশগ্রহণ করেন। এতে ৫৫ হাজার ৩ দশমিক ৬৫ কেজি চা পাতা নিলামে উঠে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭৬ টাকা।
এদিকে শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রের গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ লাখ ৯২ হাজার ৯৩ দশমিক ৪৬ কেজি চা পাতা বিক্রি হয়েছে। যার মূল্য ছিল ১৯ কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার ১৪৪ দশমিক ৩০ টাকা। গড় বিক্রয় মূল্য ছিল ১৭৪ দশমিক ১৮ টাকা।

ক্লোনেল টি কোম্পানী লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হক শেয়ার বিজকে জানান, ‘দেশে কিছুটা বৃষ্টি হতে বিলম্ব হলেও এখন যদি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তাহলে আমাদের চায়ের লক্ষ্যমাত্রা আমরা অর্জন করতে পারবো। আমাদের আশা এই বছর নিলামে চায়ের মূল্য বৃদ্ধি পাবে, কারণ সব জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, সে তুলনায় চায়ের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি। আশা করি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চায়ের মূল্যও বৃদ্ধি পাবে, কারণ আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এই চা নিলামের মাধ্যমে বাংলাদেশে চা শিল্পে আমরা অবদান রাখতে পারবো।’
শ্রীমঙ্গল ব্রোকার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ শেয়ার বিজকে জানান, ‘২০২৩-২৪ নিলাম বর্ষে আজকের নিলামে ৫টি ব্রোকার্স হাউস অংশগ্রহণ করে। প্রায় ৫৫ হাজার কেজি চা পাতা অপারিং হয়েছে। এতে প্রায় ১৫/১৬ চা বাগান এখানে চা দিয়েছে এবং ভালো চায়ের দাম বেশী পেয়েছে। সাবারি গ্রীনটি ১৯৫০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হয়েছে। নন্দরানী চা বাগানের চা সর্বোচ্চ ২৮১ টাকা এবং দিলকুশা চা বাগানের চা ২৮১ টাকা বিক্রি হয়। আমরা আশাবাদী এখানে ভালো চা অপারিং করলে ভালো দাম পাবে। এবং বায়াররাও অংশগ্রহণ করবে। আমরা আশা করবো এবং অনুরোধ করবো সিলেট ভ্যালীর যে, বাগান মালিকরা আছে তারা এখানে অন্তত ৫% বা ১০% চা অপারিং করেন তাহলে আমরা ভালো দাম দেওয়ার চেষ্টা করবো।’
শ্রীমঙ্গলস্থ টি ট্রেডার্স অ্যান্ড প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সদস্য সচিব জহর তরফদার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে আজ প্রথম চা নিলামে ২০টির মতো বাগানের চা এখানে উপস্থাপিত হয়েছে। চা বিক্রি ভালো হয়েছে, এবং পরিমাণগতভাবে ও ভালো হয়েছে। তাছাড়া নতুন চায়ের দামও ভালো। এবছরের সুখবরটি হলো বাংলাদেশে যারা বড় বড় বায়ার রয়েছে, বিশেষ করে ইস্পাহানি তারা এই নিলামে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমাদের চা নিলাম কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড হওয়ার পরে জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামের অস্থায়ী কার্যালয়ে নিলাম করছি। চা নিলাম কেন্দ্রের একটি স্থায়ী অবকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এবছর না হলেও আগামী বছর স্থায়ী অবকাঠামোতে নিলামসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবো।’
বাংলাদেশ চা বোর্ড সুত্রে জানা যায়, ‘২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রে মোট ২৩টি চা নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ১৮টি এবং আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ৫টি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। সপ্তাহের মাঝে শুধুমাত্র বুধবার ভিন্ন ভিন্ন তারিখে নিলামের মাধ্যমে চা ক্রয়বিক্রয় করা হবে।’
‘২০২৩ সালের ১ম নিলাম থেকে ১৭ তম নিলামের তারিখ যথাক্রমে: ২৬ এপ্রিল ২৩, ৩ মে ২৩, ১৭ মে ২৩, ৩১ মে ২৩, ১৪ জুন ২৩, ৫ জুলাই ২৩, ১৯ জুলাই ২৩ এবং ২ আগস্ট ২৩, ১৬ আগস্ট ২৩, ৩০ আগস্ট ২৩, ১৩ সেপ্টেম্বর ২৩, ২৭ সেপ্টেম্বর ২৩, ১১ অক্টোবর ২৩, ২৫ অক্টোবর ২৩, ৮ নভেম্বর ২৩, ২২ নভেম্বর, ৬ ডিসেম্বর ২৩ এবং ২০ ডিসেম্বর ২৩।’
‘২০২৪ সালের ১৮ তম নিলাম থেকে ২৩ তম নিলামের তারিখসমূহ: ৩ জানুয়ারি ২৪, ১৭ জানুয়ারি ২৪, ৩১ জানুয়ারি ২৪, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৪, এবং চা উৎপাদন মৌসুমের সর্বশেষ নিলাম হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২৪।’
উল্লেখ্য, ‘শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্র হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্র, যা মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত। ২০১৭ সালের ৮ই ডিসেম্বর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিলাম কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন। কিন্তু নানান জটিলতার কারণে সেটি তখন চালু হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১৪ মে চা নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।’