শেয়ার বিজ ডেস্ক: অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় শ্রীলঙ্কাকে প্রাথমিকভাবে ২৯০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা এক বিবৃতিতে জানায়, এ ঋণ কর্মসূচির উদ্দেশ্য শ্রীলঙ্কার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা। খবর: রয়টার্স।
বর্ধিত ঋণ সুবিধার অধীন আইএমএফ চার বছর মেয়াদে এ ঋণ দেবে। আইএমএফের ব্যবস্থাপনা ও নির্বাহী বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে এবং শ্রীলঙ্কার শর্ত পূরণের ভিত্তিতে এ চুক্তি চূড়ান্ত হবে। এ ঋণের জন্য শ্রীলঙ্কার সরকারি ঋণদাতাদের কাছ থেকে অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা চেয়েছে আইএমএম, পাশাপাশি বেসরকারি ঋণদাতাদের সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে সংস্থাটি। বিবৃতিতে বলা হয়, আইএমফের ঋণ পরিশোধ ও অর্থায়নের ব্যবধান দূর করতে শ্রীলঙ্কার ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি ও বহুপক্ষীয় অংশীদারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থায়নের নিশ্চয়তার প্রয়োজন পড়বে।
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থিক সংকটে পড়েছে ভারত মহাসাগরের ছোট দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় তারা জ্বালানি তেল, খাবার ও ওষুধের মতো জরুরি পণ্য আমদানি করতে পারছে না দেশটি। নিত্যপণ্যের দাম সেখানে আকাশ ছুঁয়েছে। থমকে গেছে স্বাভাবিক জনজীবন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ঘাটতিতে কয়েক মাস ধরে ধুঁকছে শ্রীলঙ্কা। সামষ্টিক অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার চরম নজির স্থাপন করেছে দেশটি। সংকটময় এ পরিস্থিতিতে দেশটি আইএমএফের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি জরুরি ঋণ চায়। আইএমএফের এ ঋণ কর্মসূচির লক্ষ্য শ্রীলঙ্কাকে রাজস্ব পুনর্গঠনে সহায়তা, জ্বালানি ও বিদ্যুতের জন্য নতুন মূল্য নির্ধারণ, সামাজিক ব্যয় বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন জোরদার এবং দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ পুনর্গঠন করা। কিস্তি দিতে না পারায় শ্রীলঙ্কার প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলারের ঋণ পুনর্গঠন করতে হবে। এ ব্যাপারে আলোচনার জন্য ভারত ও চীনসহ অন্যান্য প্রধান ঋণদাতা দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে জাপান। ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশিরভাগ সার্বভৌম বন্ডের বিষয়েও আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একটি চুক্তি করতে হবে শ্রীলঙ্কাকে, যেগুলো এখন খেলাপি শ্রেণিভুক্ত রয়েছে।
দেশটিকে জরুরি ঋণ সহায়তা দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বুধবার কলম্বোয় ছিল। তারা শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের নানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এদিন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও তারা একটি প্রাথমিক (স্টাফ লেভেল) চুক্তিতে উপনীত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। স্টাফ পর্যায়ের চুক্তিগুলোয় সাধারণত আইএমএফের ব্যবস্থাপনা ও নির্বাহী পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। তারপরই কেবল ঋণগ্রহীতা দেশ ওই তহবিল হাতে পায়। আর্থিক সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে গত মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা চলেছে বলে জানান এক কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রথমে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। দেশটির সংকটময় পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রনিল বিক্রমাসিংহে, যিনি গত মঙ্গলবার সংসদে তার প্রথম বাজেট
পেশ করেছেন।
বিশেষজ্ঞের মতে, রাজাপক্ষে পরিবারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণে শ্রীলঙ্কা ডুবেছে। এলটিটিই সমস্যা, তথা গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটেছিল ২০০৯ সালে। তারপর থেকে দেশটি উৎপাদনে নজর না দিয়ে আমদানির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করে। অর্থাৎ আমদানি বাণিজ্য ছিল বেশি, আর রপ্তানি বাণিজ্য ছিল প্রতিবেশী দেশের তুলনায় অনেক কম। কভিডের কারণে তাদের পর্যটন খাতে ধস নামলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত তলানিতে এসে ঠেকে। ২০১৯ সালের শেষ দিকেও কলম্বোর কাছে ৭ বিলিয়ন বা ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ছিল, যা এ বছরের জুনে ১৯০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে; অর্থাৎ আমদানির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। তাতে মুখ থুবড়ে পড়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি।