শেয়ার বিজ ডেস্ক: আশঙ্কা করা হচ্ছে, খাদ্য সংকটের কারণে ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে শ্রীলঙ্কায়। আসছে বছরে চরম খাদ্য সংকটে ভুগতে পারে দেশটি।
এজন্য দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দেশটির কৃষক। খবর: ডেইলি মিরর।
‘আপি ওয়াআমু রাতা নাগামু’ (উৎপন্ন করো ও জাতি বাঁচাও) কর্মসূচির প্রধান ও শ্রীলঙ্কা কৃষি বিভাগের পরিচালক কেবি গুনারতত্নের তথ্য অনুসারে, অতীতে দুটি দুর্ভিক্ষ হয়েছে। এর আগে টানা ছয় মাসের অতি খরার কারণে একবার এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটলে দ্বিতীয়বার দুর্ভিক্ষে পড়ে দ্বীপরাষ্ট্রটি।
গুনারত্ন বলেন, এ দুর্যোগের পর সুদূর অতীতের আর কোনো দুর্ভিক্ষ হয়নি এবং এমনকি অদূর ভবিষ্যতেও এমন দুর্যোগে পড়ার সম্ভাবনাও নেই। এরপরও প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী কিংবা অন্য কোনো মন্ত্রীকে বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে, আগামী বছর দুর্ভিক্ষ হতে পারে। কেননা ভয়াবহ খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। এমন ঘটলে এজন্য দায়ী করা হবে সরকারকে। এতে সরকারের অক্ষমতা প্রকাশ পাবে।
গুনারত্নে বলেন, আমরা বারবার সরকারকে অপ্রত্যাশিত ক্ষুধার সংকট সম্পর্কে সতর্ক করেছি। তাই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আমরা ‘চাষ যুদ্ধ’ শুরু করার কথা বলেছি।
খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতিতে চতুর্থ স্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। একই সঙ্গে বিশ্বে শিশু অপুষ্টিতে দেশটির অবস্থান ষষ্ঠ এবং এশিয়ায় দ্বিতীয়। তাই গুনারত্নে মাহা মৌসুমে (সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ) ব্যাপক ফসল উৎপন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন।
কৃষকরাও মাহা মৌসুমের জন্য প্রস্তুত। তবে সরকার এখনও প্রস্তুত নয়। এ মৌসুমের জন্য ২০ অক্টোবরের মধ্যে সেচ দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। গুনারতেœর মতে, কৃষকদের এখন সার দেয়া উচিত। কিন্তু কৃষকরা এখন পর্যন্ত কোনো সার পাননি, কারণ সরকারের কোনো সঠিক পরিকল্পনা নেই। অর্থাৎ সঠিক সময়ে সার পাওয়া না গেলে আশানুরূপ ফসল উৎপন্ন হবে না। এ কারণে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। এ অপকর্মের জন্য দায়ী সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদরা। কর্মকর্তারা দায়ভার চাপিয়ে দিয়েছে রাজনীতিবিদদের ওপর এবং রাজনীতিবিদরা বিরোধী দল ও জনগণকে দোষারোপ করছে।
পানি ছাড়ার পর এবং চাষাবাদ শুরু হলে প্রতি দুই, চার ও ছয় মাস পর ইউরিয়ার দরকার পড়বে। এই সার আমদানির জন্য ১৪ অক্টোবরের মধ্যে টেন্ডার অনুমোদন হওয়ার দরকার ছিল। এরপর সার পৌঁছাতে দুই মাস লাগবে।
গুনারত্নের মতে, চাষাবাদের সময় সার না পেলে শস্য উৎপন্ন করা যাবে না এবং খাদ্যের অভাব দেখা দেবে।
এবারের মাহা মৌসুমে কৃষকরা ৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন (৮৫ লাখ) হেক্টর জমিতে আবাদ
করবেন কিন্তু এজন্য দরকার সার। অন্যথায় আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে খাদ্যের অভাব দেখা দেবে।
এর আগে ইয়ালা মৌসুমে (মে থেকে আগস্ট) পর্যাপ্ত শস্য উৎপন্ন না হওয়ায় সরকার চাল আমদানি করতে বাধ্য হয়, যা ছিল অখাদ্য। এমনকি এর পরিণতি সম্পর্কেও কিছু জানায়নি সরকার। মাহা মৌসুমে একই ভুল করতে যাচ্ছে সরকার। তাই গুনারতেœ বলেন, চাষ যুদ্ধ শুরু করার বিকল্প নেই। ইয়ালা মৌসুম শুরু হওয়ার ২ থেকে ৩ সপ্তাহ আগে সার পেলেও অব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত ফসল উৎপন্ন করা যায়নি। এছাড়া ধান কেনার জন্য সরকারি বরাদ্দও
বিতরণ করা হয়নি। এই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি আরও বলেন, মাহা মৌসুমে এমন দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী মাহিন্দা আমারাভিরা বলেন, মাহা মৌসুমে প্রতি হেক্টর জমির জন্য প্রায় ৮ মেট্রিক টন সার দেয়া হবে।
তার এ ঘোষণার পর প্রশ্ন উঠেছে, এটা কী আদৌ সম্ভব? কেননা ধান চাষাবাদ নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা এখনও চোখে পড়েনি। উপরন্তু নতুন করারোপ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে কৃষক। গোপনে কৃষকদের আয়ের ওপর করা বসাতে যাচ্ছে রনিল সরকার। নতুন করা চাপিয়ে দেয়া হলে কৃষকরা কৃষিকাজ ছেড়ে দেবে বলে জানিয়েছেন গুনারতেœ। এতে আরও বাড়বে খাদ্য সংকট এবং বিশ্বের সামনে আরও একবার অপমানিত হবে সরকার।