শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত

গত কয়েক দিনে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। কারণ দেশটি মানব উন্নয়ন ও অর্থনীতির নানা মানদণ্ডে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও নানা ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে বর্তমানে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ দুরবস্থার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে দেশটির অনিয়ন্ত্রিত বৈদেশিক ঋণকে। সঠিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ না করে অবিমৃষ্যকারীর মতো ঋণ নিতে থাকলে একটি রাষ্ট্রের কী ধরনের পরিণতি হতে পারে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশও বর্তমানে বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পে কয়েকটিতে বড় অঙ্কের বিদেশি ঋণও রয়েছে। কাজেই এসব ঋণ ব্যবস্থাপনা যাতে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে সজাগ থাকা একান্ত আবশ্যক বলে মনে করি।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘বৈদেশিক ঋণে এখনও ঝুঁকিমুক্ত অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, মোট জিডিপির অনুপাতে শ্রীলঙ্কার বর্তমান বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ৬১ শতাংশ। যদিও জিডিপির বিপরীতে এ ঋণের অনুপাত ২০ শতাংশ থাকাকে আদর্শ মনে করা হয়। আর বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপির তুলনায় বৈদেশিক ঋণের অনুপাত ১৭ শতাংশ। চার বছর আগে যা ছিল ১৩ শতাংশের মতো। সে হিসাবে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ও জিডিপির বিপরীতে আনুপাতিক হার খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের ঋণ আরও বাড়বে বৈ কমবে না বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কাজেই বাংলাদেশ যাতে ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কার মতো দুরবস্থার সম্মুখীন না হয়, সে বিষয়ে এখন থেকে সতর্ক পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করি।

এ কথা ঠিক যে, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও এর নানা বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যের তেমন মিল নেই। আবার সেখানে সরকার জনপ্রিয় হওয়ার জন্য যে ধরনের পপুলিস্ট পদক্ষেপ নিয়েছে, বাংলাদেশ সে ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেনি বা করছেও না। সুতরাং বাংলাদেশে আপাতদৃষ্টিতে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার তেমন সুযোগ নেই বলেই ধরে নেয়া যায়। তাই বলে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকারও সুযোগ নেই বলে মনে করি। কারণ প্রতিবেশীর বাড়িতে আগুন লাগলে তার আঁচ কিছুটা হলেও পাশের বাড়িতে এসে পড়ে। তাছাড়া বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে কিছু অর্থ ঋণও দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা যদিও সত্যিই দেউলিয়া হয়ে যায়, তাহলে এ ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়েও সংশয় দেখা দিবে। কাজেই সার্বিকভাবে শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এখন থেকেই সতর্কভাবে পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করি। নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলেই বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০