Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:38 pm

শ্রেণিকক্ষে মানসম্পন্ন পাঠদান নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিন

‘বাংলাদেশে বিদ্যালয় শিক্ষা: মহামারি-উত্তর টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক এক গবেষণায় তথ্য উঠে এসেছে, দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পরিবারগুলোর শিক্ষার ব্যয় বাড়ছে। পঞ্চম শ্রেণি ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রাথমিকে শিক্ষার্থীপিছু পরিবারে ব্যয় বেড়েছে ২৫ শতাংশ, আর মাধ্যমিকে বেড়েছে ৫১ শতাংশ। এই ব্যয়বৃদ্ধির বড় কারণ কোচিং-প্রাইভেট ও নোট বা গাইড বই বাবদ খরচ। শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের তত্ত্বাবধানে গবেষণাকাজটি হয়েছে।

সন্তানের শিক্ষা অনেক পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে উঠেছে। এবারের গবেষণায় দেখা গেছে, কভিড মহামারির প্রভাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। আর ঝরে পড়া মেয়েশিশুদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। গবেষণাকালে যেহেতু সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিদের মতামত নেয়া হয়েছে, তাই বলা যায়, এটি সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে গুরুত্ব পাবে।

২০২২ শিক্ষাবর্ষে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর জন্য পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা। তবে পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে প্রাথমিকে এই খরচ ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় আট হাজার ৬৪৭ টাকায়। ২০২২ সালে মাধ্যমিক স্তরের একজন শিক্ষার্থীর জন্য পরিবারের গড় ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এ খরচ ৫১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৭১২ টাকায়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় ক্ষেত্রে এই ব্যয় বৃদ্ধি প্রধানত কোচিং ও প্রাইভেট টিউটরের বেতন এবং নোট বা গাইড বই বাবদ হয়েছে।

আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে শ্রেণিকক্ষে মানসম্মত পাঠ পেলে খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থীর আলাদা কোচিং-প্রাইভেট পড়তে হয়; কিংবা নোট-গাইড বই প্রয়োজন হয়। অথচ শিক্ষায় ব্যয় বেড়েছে এসব খাতেই। তাই বলা যায়, শিক্ষার্থীরা মানসম্মত পাঠ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর যা-ই হোক, সন্তানের শিক্ষার প্রশ্নে আপস করেন না সচেতন অভিভাবক। একপ্রকার বাধ্য হয়ে তারা সন্তানকে নামিদামি কোচিংয়ে ভর্তি করান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও সব জানেন। তারা শিক্ষার্থীকে বিকল্প পন্থায় পাঠদানে প্ররোচিত করেন।

কভিড-পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটরের সহায়তা নিয়েছে বা কোচিং সেন্টারে গেছে। শ্রেণিকক্ষে যথাযথ পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা গাইড বইয়ের ওপর অধিক নির্ভরশীল ছিল। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় এই নির্ভরতার হার ছিল যথাক্রমে ৯২ ও ৯৩ শতাংশ।

শিক্ষার্থীরা যাতে শ্রেণিকক্ষেই পাঠ সম্পন্ন করতে পারে, সে ব্যবস্থা নেয়া গেলে প্রাইভেট টিউটর কিংবা নোট-গাইড বই বাবদ অভিভাবকদের অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে না।

শিক্ষকের পেশাগত উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। পরিবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার মানসম্মত শিক্ষাদানের জন্য শ্রেণিকক্ষেই তা নিশ্চিত করতে হবে। তাই প্রশিক্ষণ উপকরণ, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষকের মান প্রভৃতি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিতে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা সংস্কার ও যুগোপযোগী করে শ্রেণিকক্ষেই পাঠদানের ব্যবস্থায় গুরুত্ব দিতে হবে।