আফ্রিয়া অলিন সব দেশেই বহুল পরিচিত ও জনপ্রিয় খেলা অ্য্যাথলেটিকস। স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করে আঞ্চলিক কিংবা অলিম্পিক পর্যন্ত চলে এই খেলা। অ্য্যাথলেটিকসের বড় পরিচয় হলো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন খেলাএটি। প্রাচীন গুহাবাসী মানুষেরা আত্মরক্ষা ও বেঁচে থাকার বা অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যে পন্থা ও পদ্ধতি অবলম্বন করত, কালের বিবর্তনে সেগুলোই ক্রীড়া হিসেবে পরিচিতি ও স্বীকৃতি পায়।
আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু হয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতার।
প্রতি বছর সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এই প্রতিযোগিতার অপরিহার্য খেলা অ্যাথলেটিকস। এ খেলা মূলত দৌড়, লাফ ও গোলক বা চাকতি নিক্ষেপের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। বার্ষিক এই প্রতিযোগিতাগুলোতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ও আনন্দের সঙ্গে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয় বলে দর্শক হিসেবে স্থানীয় জনসাধারণের সমাগম হয়। এতে করে প্রতিযোগীরা অনেক আগ্রহী ও উৎসাহী হয়।
বর্তমানে দেশের পেশাদার অ্যাথলেটরা নানা সংকটে রয়েছেন। অ্যাথলেটিকস প্রচুর কষ্ট সাধ্য খেলা। এক সেকেন্ড সময় ( দৌড়ের ক্ষেত্রে) কমাতে বা এক সে. মি. দূরত্ব (লাফ ও নিক্ষেপের ক্ষেত্রে) বাড়াতে প্রচুর কঠোর অনুশীলন করতে হয় খেলোয়াড়কে। তবুও খেলোয়াড়রা আশানুরূপ সুবিধা পাচ্ছে না। জাতীয় পর্যায়ে যে প্রতিযোগিতাগুলো অনুষ্ঠিত হয় সেখানে রয়েছে দর্শকের হাহাকার। দর্শক ছাড়া কোনো প্রতিযোগিতাই আনন্দদায়ক হয় না। দর্শকবিহীন প্রতিযোগিতায় খেলোয়াড়রা আগ্রহ ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।
‘দ্রুততম মানবী’ খ্যাত শিরিন আক্তার দেশের অন্যতম নারী অ্যাথলেট। টানা ১৫ বার দেশের দ্রুততম মানবীর গৌরব অর্জন করেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে সুনাম বয়ে আনেন। তিনি বিকেএসপির সাবেক শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কর্মরত আছেন। দেশের সাবেক দ্রুততম মানব মেজবাহ আহমেদ। তিনিও বিকেএসপির সাবেক অ্যাথলেট। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে বহু সুনাম ও সাফল্য বয়ে এনেছেন। মেজবাহ- শিরিনের মতো আরও অনেক কৃতী খেলোয়াড় দেশের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। এই কৃতী সন্তানদের দেশবাসী কতটুকু জানেন?
বহুল পরিচিত খেলা হলেও সঠিক প্রচারণার অভাবে রয়েছে দর্শকের হাহাকার। প্রচার-প্রচারণার স্বল্পতার ফলে খেলোয়াড়রা তাদের উপযুক্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সদ্য এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় গৌরব অর্জনকারী বিজয়ীদের সাফল্যের কথা দেশবাসীর কাছে সঠিকভাবে প্রচার করা হয়নি। অনেকেই দেশের এসব কৃতিত্ব ও কৃতী সন্তানদের কথা জানে না ও চেনে না। ওই ইনডোর অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় বিকেএসপির সাবেক ও বর্তমানে নৌবাহিসীর ক্রীড়াবিদ জহির রায়হান ৪০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। মাহফুজুর রহমান উচ্চলম্ফন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। তাদের এ সাফল্য দেশের জন্য বিরাট কৃতিত্ব। তাদের এ সাফল্য বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। তবে দুঃখের বিষয় এই যে, জহির-মাহফুজদের সেভাবে কোনো সংবর্ধনা দেয়া হয়নি। এমনকি আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করা হয়নি। দেশের জন্য তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তেমন কোনো ফল পাচ্ছেন না। এতে করে তাদের আত্মবিশ্বাস ধীরে ধীরে কমে যাবে।
খেলোয়াড়দের খেলার মান ধরে রাখার জন্য বেশি বেশি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। সেইসঙ্গে বাছাইকৃত খেলোয়াড়দের সারা বছর ক্যাম্পের ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানে তাদের উপযুক্ত খাবার, বাসস্থান ও অন্যান্য সুবিধা দিতে হবে। প্রণোদনা সব সময়ই মানুষকে কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়ায়। প্রতিযোগিতাগুলোতে যদি ব্যাংক, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিনিয়োগ পাওয়া যায় এবং খেলোয়াড়দের আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করা হলে খেলোয়াড়রা খেলার প্রতি আরও বেশি উৎসাহিত হবে।
পেশাদার খেলোয়াড়রা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। ভালো খেলেও আশানুরূপ সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা। পেশাদারি অ্যাথলেটরা সঠিক পারিশ্রমিক পায় না। এতে অনেকেই খেলাধুলা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। বেতন-ভাতা কম থাকায় ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তারা। নিশ্চিত ভবিষ্যৎ নেই বলে অনেক খেলোয়াড়ই খেলাধুলা ছেড়ে দিয়েছেন। খেলোয়াড়দের উপযুক্ত সম্মান ও অন্যান্য সুবিধা এবং ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার, ফেডারেশন, জনগণ এবং বেসরকারি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা কাম্য।