সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রভাবে বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের তারকা হোটেল ব্যবসা এখন গভীর সংকটে। বাণিজ্যিক, শিল্প, বন্দর ও পর্যটনের জন্য চট্টগ্রামের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। কিন্তু করোনাকালে পর্যটনশূন্য হওয়ায় তারকা হোটেলগুলোর লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ কারণে নবনির্মিত অনেক হোটেল ক্রেতার অভাবে খালি পড়ে আছে কিংবা নির্মাণাধীন হোটেল বিক্রয়ের জন্য ক্রেতা খোঁজা হচ্ছে। আবার কোনোটির কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে হতাশ এ খাতের উদ্যোক্তারা।
হোটেল ব্যবসা উদ্যোক্তাদের মতে, দেশের প্রধানতম বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রাম। বন্দরকেন্দ্রিক শহর হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত বাণিজ্যিক, শিল্প, পর্যটন, মেগা প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান। এছাড়া নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠছে। এসব কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগমন বেড়েছে কয়েক গুণ। ফলে প্রয়োজন রয়েছে আন্তর্জাতিকমানের তারকা হোটেলের। এ লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি হোটেলও গড়ে ওঠে। আরও কিছু নির্মাণাধীন রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্রথম ও একমাত্র পাঁচ তারকা হোটেল র্যাডিসন ব্লু বে টিচাগং প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনও লোকসানে। এমনকি শতভাগ অপারেশনাল কার্যক্রমও চালু হয়নি। আরেকটি আন্তর্জাতিক হোটেল ‘বেস্ট ওয়েস্টার্ন অ্যালায়েন্স’ শুরুতে হোঁচট খায়। আগ্রাবাদের তারকা হোটেল বেস্ট ওয়েস্টার্ন করোনা সংক্রমণের প্রথমদিকে কর্মীদের কয়েক মাসের বেতন দিতে পারেনি।
করোনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত ৫ জুলাই কর্মচারীরা হোটেলের সামনে ‘আমাদের বেতন দিন, আমাদের বাঁচান, বেতন চাই, দিতে হবে’এ ধরনের নানা সেøাগানে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। তাদেরই একজন আকাশ মিত্র। তিনি এ হোটেলে মাত্র ৮ হাজার টাকায় ‘বয়ের’ চাকরি করেন। আকাশের মতো আরও অনেকে দৈনিক ৯ ঘণ্টা চাকরি করেও চার মাস ধরে বেতন পাননি। চাকরি বাঁচাতে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে সংসার চালিয়েও কষ্ট করে চাকরি চালিয়ে যান তারা। হোটেল কর্তৃপক্ষকে বেতনের কথা বললেই ‘করোনায় ব্যবসা মন্দা’, ‘দিচ্ছি-দেব’ জাতীয় আশ্বাসই শুধু মিলে আসছে সেই শুরু থেকে।
অন্যদিকে মেরিডিয়ান গ্রুপের নির্মাণাধীন মেরিডিয়ান হসপিটালিটিও প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে মাঝপথে বিক্রয়ের জন্য ক্রেতা খুঁজছে। যদিও আন্তর্জাতিক হোটেল চেইন নভোটেলের যৌথ অংশদারিত্বে পরিচালনার চুক্তি ছিল। হোটেল উদ্যোক্তাদের ৫৭ কাটায় ২৪ তলা হোটেলটি নির্মাণ করতে ১২০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে আরও ২০০ কোটি টাকার মতো দরকার। প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ ৩২০ কোটি টাকায় বিক্রয় করার জন্য আগ্রহী বলে জানা যায়।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের গ্রান্ড হায়াতের সঙ্গে যৌথভাবে পাঁচ তারকা হোটেল পরিচালনার কথা থাকলেও, পরে আর অগ্রগতি হয়নি। ফলে পরে আছে সংস্থাটির ১০ থেকে ২০ তলা পর্যন্ত। অথচ ভবনটিতে হেলিপ্যাড সুবিধাও ছিল।
এ বিষয়ে মেরিডিয়ান গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের মেরিডিয়ান গ্রুপের নির্মাণাধীন মেরিডিয়ান হসপিটালিটির প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে মাঝপথে কাজ বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের মালিক পক্ষের যিনি এই প্রজেক্ট দেখাশোনা করতেন, তিনিও অসুস্থ। এর জন্য বিক্রয়ের জন্য ক্রেতা খোঁজা হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব ৫৭ কাটায় ২৪ তলা হোটেলটি নির্মাণ করতে ১২০ কোটি টাকা ঋণ হয়ে গেছে। সঙ্গে ২০ শতাংশ ব্যাংকঋণের সুদও আছে। আর প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে আরও ২০০ কোটি টাকার মতো দরকার; যা আমাদের জন্য এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে ৩২০ কোটি টাকা হলে আমরা বিক্রয় করব।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত চার তারকামানের হোটেল দি পেনিনসুলা টিচাগং লিমিটেডের কোম্পানির সচিব মোহাম্মদ নুরুল আজিম শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমানে আমাদের ৪০ শতাংশ বিজনেস হচ্ছে। তবে রেস্টুরেন্টের বিজনেস অনেক ভালো হচ্ছে। করোনার কারণে অন্য হোটেলগুলোর অবস্থা তেমন ভালো নয়। আসলে অর্থনীতির গতি কিছুটা স্থরিব হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক বছর পর এ খাতে ভালো প্রবৃদ্ধি হবে বলে তিনি মনে করেন।