শেয়ার বিজ ডেস্ক: নেপালের অর্থনীতির বিশেষ চালিকাশক্তি পর্যটন খাত। তবে কভিড-১৯ ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশটিতে বিদেশি পর্যটকদের বেড়াতে আসার হার কমে গেছে। আর মহামারির কারণে অভ্যন্তরীণ পর্যটকরা অতীতের তুলনায় ঘোরাঘুরি কমিয়ে দেয়ায় চলতি বছর সংকট রয়েছে দেশটির পর্যটন খাতে। খবর: দ্য হিমালয়ান টাইমস।
নেপালের সংস্কৃতি, পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী জীবন শ্রেষ্ঠ এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের জন্য ১২ মাসব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি চালুর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে পর্যটনের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নেপালের বৈচিত্র্যময় সহনীয় ও মনোরম আবহাওয়ার কারণে সারাবছর বিদেশি পর্যটকরা এখানে বেড়াতে আসেন। এ শ্রেণির পর্যটক আকর্ষণের জন্য আমাদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থানগুলোকে আন্তর্জাতিক মানসম্মত করে গড়ে তুলতে হবে।
নেপালের পর্যটন খাতের উন্নয়নে ফেডারেল, প্রদেশ ও স্থানীয় পর্যায়ের পাশাপাশি মন্ত্রণালয় গত রোববার একটি বিষয়ভিত্তিক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে দেশটির সাতটি প্রদেশের সব গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রের ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর জোর দেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে ক্রীড়া পর্যটন, স্বাস্থ্য পর্যটন এবং শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পর্যটনকে গুরুত্ব দেয়া হয়। পর্যটনের উন্নয়নে সরকারের এসব খাতে (তিন স্তরে) সমন্বয়ের ভূমিকা রাখতে হবে বলে মত দেন তারা।
মন্ত্রণালয়ের সচিব সুরেশ অধিকারী বলেন, একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি পর্যটন খাত। এ খাতকে গুরুত্ব দিয়ে যে কোনো দেশের উন্নতি হতে পারে, যাতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। কেননা এর ফলে অধিক কর্মসংস্থান হবে এবং বিদেশি অর্থও আসবে। মন্ত্রণালয় তাই এ খাতের উন্নতিতে সচেষ্ট রয়েছে এবং নানা ধরনের পরিকল্পনা ও কর্মসূচির আয়োজন করছে বলে জানান তিনি। বিদ্যমান সব সমস্যা সমাধানের জন্য সংস্কার আনা জরুরি বলে মনে করেন সচিব।
প্রদেশ ১, মাধেস প্রদেশ ও সুদূর পশ্চিম প্রদেশের মন্ত্রীরা যথাক্রমে খিনু লংয়া লিম্বু, শত্রুধন মাহাতো ও মান বাহাদুর ধামি পর্যটন খাতের তিন স্তরে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের বিষয়টি উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে পোখারা পৌরসভার মেয়র ধনরাজ আচার্য পোখারাকে ‘পর্যটন রাজধানী’ ঘোষণার দাবি জানান।
এ অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তারা নাথ অধিকারী ও নেপাল টুরিজম বোর্ডের নির্বাহী প্রধান ধনঞ্জয় রেগমি দেশের পর্যটন কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশেষ প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। টুরিজম বিভাগের মহাপরিচালক হোম প্রাসাদ লুইটেল ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক প্রদীপ অধিকারী জানান, অনুষ্ঠানে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবহিত করা হবে।
চলতি মাসের শুরুতে নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংকের (এনআরবি) গভর্নর মহাপ্রসাদ অধিকারী বলেন, আমাদের অর্থনীতিকে সুরক্ষা দিচ্ছে পর্যটন খাত। দেশের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, এ খাতের ক্রমবর্ধমান আয় ও রেমিট্যান্সই দেশকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। তার মতো আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারকরা পর্যটন খাতকে ঢাল হিসেবে দেখছেন। গত জুন পর্যন্ত ১১ মাসে দেশটিতে পর্যটন খাতের আয় হয়েছে ২০ কোটি ডলারের বেশি। এ সময় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় খাতটির আয় বেড়েছে তিনগুণের বেশি। সামনের দিনগুলোয়ও দেশটিতে পর্যটন আয়ের ঊর্ধ্বমুখিতা বজায় থাকার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ খাতের আরও উত্তরণ ঘটবে।
গত জুলাইয়ে দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, বিশ্বজুড়ে মুদ্রার দর ওঠানামা করছে কয়েক মাস ধরে। এতে পর্যটনশিল্প-নির্ভর দেশগুলোয় বিনিময় হারে বেশ প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে ডলারের বিপরীতে তুলনামূলক দুর্বল স্থানীয় মুদ্রাগুলোর অবমূল্যায়ন বেশি ঘটছে। এতে নেপালের মতো পর্যটননির্ভর দেশও বিপাকে পড়ছে। তবে দেশটির পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা সামনের দিনগুলোয় রুপির (স্থানীয় মুদ্রা) বিপরীতে ডলারের উত্থানে পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে আশাবাদী। তাছাড়া কভিডে ক্ষতিগ্রস্ত হোটেলগুলো ধকল কাটিয়ে উঠছে। খাতটি পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে।
গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সচেষ্ট দেশটির সরকার।