সংকটে ফুলতলার গামছা পল্লির কারিগররা

শুভ্র শচীন, খুলনা: আমাগে এহন আর গামছায় ভাত অয় না। কষ্ট বেশি, আয় কম। যে কারণে মানুষ এহন মিল-কারখানায় কাম করে। ১৯৮৮ সাল থেকে গামছা বুনছি। আগে গামছার খুব কদর ছিল। দামও ভালো পাওয়া যেত। একদিনে ৮-১০টি গামছা বোনা যায়। তাতে যে কষ্ট হয়, তার দাম পাওয়া যায় না এখন। কিন্তু কলের মিলে কাজ করলে বেশি মজুরি পাওয়া যায়। আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন খুলনার ফুলতলার আলকা গ্রামের গামছাপল্লির হস্তচালিত তাঁতশ্রমিক জেসমিন বেগম।
প্রবীণ তাঁতিরা জানান, ব্রিটিশ শাসনামলে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসংখ্য হস্তচালিত তাঁত গড়ে ওঠে। গড়ে তোলা তাঁতে তৈরি করা হতো বিভিন্ন রঙ ও সাইজের আকর্ষণীয় গামছা। কিছু তাঁতশিল্পী শাড়ি ও লুঙ্গি তৈরি করতেন। শাড়ি ও লুঙ্গি তৈরির কাজ বহুকাল আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। পরে আশির দশকে ফুলতলার গামছার রমরমা অবস্থা ছিল। এখন আর সে অবস্থা নেই।
গামছাপল্লির তাঁতিরা জানান, ভালো সবচেয়ে বড় গামছা (তিন ফুট চওড়া ও চার হাত লম্বা) দুইশ’ টাকা পিস। দুই এক ইঞ্চি ছোট পরেরটা ১২৫ টাকা পিস। সাড়ে তিন হাত লম্বা চওড়া এক গজ ৮০ টাকা পিস।
দামোদর গ্রামের তাঁতি হাকিম জানান, ফুলতলার বিভিন্ন গ্রাম নিয়ে এক সময় গামছাপল্লি গড়ে উঠেছিল। প্রায় দুই থেকে আড়াইশ’ বছরের পুরোনো এ শিল্প। রঙ, নকশা ও মানবৈচিত্র্যে এখানকার গামছার সুনাম রয়েছে সারা দেশেই। অন্য এলাকার চেয়ে এখানকার গামছার জমিন আর পাড়ের রঙ ও নকশার মধ্যে বৈশিষ্ট্য আছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় তাঁতিরা নিরুৎসাহিত হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, ফুলতলা উপজেলার আলকা, জামিরা, দামোদর, গাড়াখোলা, টোলনাগ্রামে এক সময় ঢুকলেই কানে ভেসে আসতো তাঁতের ঠক ঠক শব্দ। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ছিল তাঁত। হাজারও তাঁতি সুনিপুণ হাতে তৈরি করতেন গামছা। কিন্তু এখন মাত্র আলকা ও দামোদরের ৩০টি পরিবার গামছা তৈরি করেন। তৈরি হওয়া গামছা কোথায় বিক্রি হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় ফুলতলা বাজারে হাটের দিন গামছা বিক্রি করা হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অর্ডার পেলে গামছা তৈরি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এ শিল্পে টিকে থাকা তাঁতিরা জানান, এ শিল্পের ঐতিহ্য ও সুনাম এখনও রয়েছে। তবে হারিয়ে গেছে জৌলুস। কাঁচামাল ও উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি আর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ক্রমান্বয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। বন্ধ হয়েছে এলাকার ৯০ ভাগ তাঁত। শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সহায়তা চান তারা।
জেলা প্রশাসক আমিন-উল আহসান জানান, ফুলতলার গামছার খ্যাতি ধরে রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন বাজার তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০