নিজস্ব প্রতিবেদক: সংকট কাটিয়ে উঠছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মুন্নু সিরামিক। উৎপাদন কার্যক্রম পুরোদমে চালুর সুযোগ তৈরি হচ্ছে সিরামিক খাতের শীর্ষস্থানীয় এ কোম্পানিটির। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ব্যবসা শেষে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। এর ফলে মুন্নু সিরামিক ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ঢাকার শেষ প্রান্তে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে ধামরাই উপজেলার ইসলামপুরে মুন্নু সিরামিকের কারখানায় গ্যাসের লাইনের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে দীর্ঘদিনের সংকট থেকে উত্তরণ হলো কোম্পানিটি। একই সঙ্গে বাড়বে উৎপাদন। পাশাপাশি মুন্নু গ্রæপ পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানির জন্য আবেদন করেছে।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে মুন্নু সিরামিকের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ (পাঁচ শতাংশ নগদ ও পাঁচ শতাংশ বোনাস শেয়ার) লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর ফলে কোম্পানিটির ক্যাটাগরি পরিবর্তন হচ্ছে। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১১ পয়সা, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৯ পয়সা। আর চলতি বছরের ৩০ জুন কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৯৪ দশমিক ৩৪ টাকায়। কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ ও অন্যান্য আলোচ্য বিষয়গুলো শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামী ২৮ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার নির্বাচনের জন্য আগামী ১৬ নভেম্বর রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, মুন্নু সিরামিকের চাহিদা থাকলেও গ্যাস সংকটে বর্তমানে কোম্পানিটি পণ্য জোগান দিতে পারছে না। ফলে হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পথে অনেক গ্রাহক। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শেয়ারহোল্ডাররা। প্রতিদিন ৭০ হাজার পিস সিরামিক পণ্য উৎপাদনক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে পুরো ইউনিটগুলো কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আগে ১০ থেকে ২০ শতাংশ উৎপাদন কম হলেও বর্তমানে তা প্রায় ৩০ শতাংশ কমছে।
এ প্রসঙ্গে কোম্পানি সচিব (ভারপ্রাপ্ত) বিনয় পাল শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হতো। সরকার চাহিদানুযায়ী গ্যাস দিলে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে।
চলতি মাসের প্রথম দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, নীরবে দাঁড়িয়ে আছে কারখানাটি। দুপুরের বিরতিতে শ্রমিকরা একযোগে কারখানা থেকে বের হলে দেখা গেছে, তাদের সংখ্যা খুবই কম। কারখানার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, একসময় এ কারখানায় প্রায় চার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতেন। বর্তমানে এর সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় এক হাজারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারাখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, আগের চেয়ে উৎপাদন অনেকটাই কমে গেছে। বছর দুই-তিন ধরে গ্যাস সংকট। তবে আগে তা কম থাকলেও তিন মাস ধরে সংকট বাড়ছে। গ্যাস সংকট থাকায় শ্রমিকদের কাজ দেওয়া যায়নি। কাজ কম থাকলেও মাসের পর মাস তাদের বেতন দেওয়া হয়েছে। কাজ না থাকায় অনেক শ্রমিকই চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। যেসব শ্রমিক বর্তমানে রয়েছেন তারা বর্তমানে এক শিফটে কাজ করতে পারছেন। অথচ একসময় এ কারখানায় তিন থেকে চার শিফটে পণ্য উৎপাদন করা হতো। বর্তমানে এক শিফটে কাজ চলছে।
কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, মুন্নু সিরামিকের পণ্যের খ্যাতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে। এ কোম্পানির পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্ডার আসার পর দেরিতে পণ্য সরবরাহ করা হয়। কোনো কোনো দেশের অর্ডার পাওয়ার প্রায় তিন থেকে চার মাস পর পণ্য পাঠানো সম্ভব হয়। তাছাড়া দেশি মার্কেটেও এ পণ্যের চাহিদা রয়েছে। দেশি গ্রাহকদের বেশ অর্ডার থাকলেও তা সময়মতো সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
কোম্পানির লভ্যাংশ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১১ সালের পর থেকে কোম্পানিটি পাঁচ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়ে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা দুই কোটি ৩৯ লাখ ২৮ হাজার ২০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৬১ দশমিক ১৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে শূন্য দশমিক শূন্য চার শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিদিন ৭০ হাজার পিস সিরামিক পণ্য উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে মুন্নু সিরামকের। গ্যাস সংকটের কারণে এত দিন এত পরিমাণ উৎপাদন হতো না। এখন এ সমস্যা লাঘব হবে।