পলাশ শরিফ: নতুন করে পথচলা শুরুর পাঁচ বছরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজ। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের কোম্পানি ইউনিয়ন ক্যাপিটালের সহযোগী প্রতিষ্ঠানটির আয় ও মুনাফার ওপর চাপ বাড়ছে। ২০১২ সালে নতুন নামে পথচলা শুরুর পর ২০১৩ সালে মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। এর পরের বছরেই লোকসানের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও সর্বশেষ অর্থবছরে ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজের মুনাফা কমেছে। এর জের ধরে গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা প্রায় ৩৫ লাখ টাকা বা প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে।
অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতিতে শেয়ার লেনদেন থেকে আয় কমা, বিনিয়োগ করা শেয়ারের দর কমে যাওয়া, বিনিয়োগ ও সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ এবং ক্রমবর্ধমান ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের কারণে বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাজার পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সিকিউরিটিজ হাউজগুলো চলমান ধকল কাটিয়ে উঠতে পারবে না বলে মনে করছেন দায়িত্বশীলরা।
আলাপকালে ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়ালী উল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘হাউজের আয়-মুনাফা পুঁজিবাজারের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। ২০১০ সালের ধসের পর থেকে বাজার অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা আগের তুলনায় ভালো করছি। তবে মার্জিন ঋণ আর বিনিয়োগের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে গিয়ে মুনাফা কমেছে। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে যাচ্ছি। বাজার কিছুটা ভালো হলে আগামীতে আরও ভালো করতে পারবো।’
মূল প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ক্যাপিটালের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে ব্রোকারেজ কমিশন, বিনিয়োগ ও মার্জিন ঋণের সুদ এ তিন খাত থেকেই ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজের আয় বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা এর আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় ১৪ কোটি এক লাখ টাকা বেশি। এর জের ধরে ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজের পরিচালন মুনাফাও আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় ছয় কোটি টাকা বেড়েছে।
তবে আয়-পরিচালন মুনাফা বাড়লেও কর-পরবর্তী মুনাফা বাড়েনি। উল্টো আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা বা ৬৯ শতাংশ কমেছে। সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় এক কোটি সাত লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা এর আগের আর্থিক বছরে প্রায় তিন কোটি ৪৯ লাখ টাকা ছিল। আয় বাড়লেও মুনাফা কমার জন্য বিনিয়োগ করা শেয়ারের দাম কমে যাওয়া ও সন্দেহজনক মার্জিন ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণকেই দায়ী করা হচ্ছে। তথ্যমতে, এ সময়ে বিনিয়োগ করা শেয়ারের মূল্য কমে যাওয়ার কারণে প্রায় এক কোটি ১৯ লাখ টাকা ও সন্দেহজনক মার্জিন ঋণের বিপরীতে এক কোটি ৭২ লাখ টাকা প্রভিশন রেখেছে কোম্পানিটি।
এদিকে গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১২ সালে নতুন নামে পথচলা শুরু করে সিকিউরিটিজ হাউজটি। ওই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল প্রায় এক কোটি ৪২ লাখ টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির বিপরীতে বিরূপ বাজার পরিস্থিতির কারণে এরপরের বছরে মুনাফা প্রায় এক কোটি ১৭ লাখ টাকা কমে মাত্র ২৫ লাখ টাকায় নেমে আসে। বাজার অবস্থার উন্নতি না হওয়াসহ আরও কিছু কারণে পরের আর্থিক বছরে (২০১৩-১৪) প্রায় তিন কোটি ১৪ লাখ টাকা লোকসান গোনে ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজ। এরপর বাজারে গতি ফিরতে শুরু করলে ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় মুনাফা কাটিয়ে উল্টো তিন কোটি ৪৯ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ বিনিয়োগ করা শেয়ারের দর কমে যাওয়া ও সন্দেহজনক মার্জিন ঋণের কারণে এক বছরে কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা বা ৬৯ শতাংশ কমেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে টিকে থাকতে হিমশিম খেলেও কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে তার কোনো ছাপ নেই। ২০১২ সালে ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা ব্যয় দুই কোটি ৭৯ লাখ টাকা ছিল, যা সর্বশেষ আর্থিক বছরে দাঁড়িয়েছে সাত কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা ব্যয় প্রায় চার কোটি ৯৫ লাখ টাকা বা ১৭৭ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে। অথচ এ সময়ে আয় ১৭২ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়েছে। আয়ের তুলনায় ব্যয়হার বেশি ও মার্জিন ঋণের বোঝা টানতে গিয়ে পিছিয়ে পড়েছে হাউজটি।
উল্লেখ্য, ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজের মূল প্রতিষ্ঠান নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের কোম্পানি ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তালিকাভুক্তির পর থেকে কোম্পানিটির মুনাফা বাড়ছে। সর্বশেষ আর্থিক বছরে প্রায় ২০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে কোম্পানিটি। ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটি ওই আর্থিক বছরে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। ডিএসইতে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার গতকাল সর্বশেষ ২৬ টাকা ৬০ পয়সা দরে লেনদেন হয়েছে। তবে সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজ মূল প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না। তবে ২০১৪ সালের পর থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।