শেয়ার বিজ ডেস্ক: সমাজের নানা অসংগতি ও কটুবাস্তবতার বিরুদ্ধে সূক্ষ্ম আঘাত করে প্রবচন। সচরাচর প্রবাদ আর প্রবচনকে এক করে দেখা হয়। তবে দুয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সমকালীন লেখক-চিন্তকরা প্রবচনকে কাগজে-কলমে আবদ্ধ করেন। কালক্রমে এর মধ্যে যেগুলো মানুষের মুখে-মুখে প্রচার-প্রসার পায়, সেগুলো প্রবাদে পরিণত হয়। তখন হয়তোবা হারিয়ে যায় প্রবাদটির মূল রচয়িতার নাম। বাংলায় এমন প্রবাদের শেষ নেই। এদেশের লোকসাহিত্যের মধ্যেও লুকিয়ে আছে এমন হাজারও প্রবাদ; কিন্তু প্রবচনসাহিত্যে খরা চলছে।
এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সৈয়দ শিশির ২০০টি প্রবচন নিয়ে হাজির হয়েছেন। পকেট সাইজে তার প্রবচনগুচ্ছ পরিবেশন করছে গণপ্রকাশন। প্রবচনের ধরা-বাঁধা কোনো আকার নেই। সংক্ষিপ্ত ও তির্যক হওয়াটা এর বৈশিষ্ট্য। সেক্ষেত্রে সৈয়দ শিশিরের প্রবচনগুলো যথেষ্ট সার্থক।
তিনি সমকালীন রাজনীতি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাস্তবতা আর স্বার্থপরতায় পরিপূর্ণ মানব স্বভাবের একেকটি দিক তুলে ধরেছেন একেকটি প্রবচনে। তবে সরাসরি কারও নাম উল্লেখ করেননি। কোনো প্রবচন তিন-চার লাইনে, আবার কোনোটি মাত্র কয়েকটি শব্দে পরিপূর্ণ। শিশির লিখেছেন, ‘মৃতের ঠোঁটে লিপস্টিক দেখে হাসি/জনসেবার নমুনা দেখেও হাসি।’ সরল একটি উপমা। আর তার ওপর ভিত্তি করে একটি পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন লেখক।
তিনি বলছেন, ‘জুতা পায়েই শোভা পায়/মাথায় তুললে বিপত্তি।’ স্বার্থপর আর শোষক শ্রেণির চরিত্র তুলে ধরে লিখেছেন, ‘দেবে না এক টাকা, দেখাবে কোটি টাকা। শোনাবে, লাগলে বইলেন!’ উদ্যোক্তা মাত্রেরই এমন দানবীরের সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা হয়তো রয়েছে। আর সে বাস্তবতাই ফুটে উঠেছে এ দুটি পঙ্ক্তিতে। মানব সম্পর্কের কেন্দ্রে নিহিত থাকে অর্থবিত্ত আর নারী-পুরুষের সম্পর্ক। সে বাস্তবতাই ২০০টি প্রবচনের অধিকাংশের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। শিশির বলছেন, ‘টাকায় দেহ পাওয়া যায়, মন নয়। অবশ্য কেউ কেউ মন বন্ধক রাখে।’ আবার অন্যত্র বলছেন, ‘লাভের আশায় সব বিলিয়ে শূন্য কেন তবে?’ স্পষ্টতই কর্মব্যস্ত এ নগরজীবনে যারা বইপাঠে অনভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন, তারাও সংক্ষিপ্ত আর তির্যক এ ব্যতিক্রম সাহিত্যকর্মের স্বাদ নিতে পারেন ৫০ টাকার বিনিময়ে। সৈয়দ শিশির মূলত একজন কবি। তিনি লিখছেন সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও। কাজ করছেন গণমাধ্যমে। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন মাহতাব শফি। ভেতরের সজ্জা করেছেন অপূর্ব কুমার মণ্ডল।
Add Comment