সংগ্রামী এক উদ্যোক্তার পাশে গ্রামীণ ব্যাংক

শেয়ার বিজ ডেস্ক : গাজীপুরের বাসন থানার ভোগড়া পূর্বপাড়ার বাসিন্দা হ্যাপি আক্তার। পাঁচ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবার বড়। কলার আড়তের হিসাবরক্ষক বাবার স্বল্প আয়ে এই বড় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে এবং অভাব-অনটনের সংসারে প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি তিনি। বাবার স্বল্প আয়ের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থার জন্য নিজের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নও মাটি হয়ে যায়। জীবন সম্পর্কে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিয়েও হয়ে যায় হ্যাপি আক্তারের। চাঁদপুর সদর নিবাসী স্বামী আফরোজ কামাল তখন পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। খানাখন্দযুক্ত জলাকার একটি জমিতে মাটি ভরাট করে থাকার সামর্থ্য না থাকায় এর পাশেই টিনের ঘর তুলে বসবাস করতে থাকেন হ্যাপি আক্তার। বাড়িতে ছিল না টিউবওয়েল, পুকুরের পানি ছিল তার দৈনন্দিন জীবনযাপনের অন্যতম উৎস। ভাগ্যের বিড়ম্বনা যেন কোনোমতেই পিছু ছাড়ছিল না হ্যাপির। ক্যাসেট/সিডি প্লেয়ার ক্রয়ের জন্য পুরান ঢাকা থেকে স্বামীর ব্যবসার ৬০ হাজার টাকা পুঁজি ছিনতাই হয়ে যাওয়ার পর দুশ্চিন্তার আঁধারে ঢাকা পড়ে জীবিকার পথ। তবুও হ্যাপি আক্তার জীবনযুদ্ধে ভেঙে পড়েননি, চেষ্টা চালিয়ে গেছেন কীভাবে ভাগ্যের চাকা ঘোরানো যায়। 

এমন অবস্থায় হ্যাপির পাশে দাঁড়ায় গ্রামীণ ব্যাংক। ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক গাজীপুর জোনের বাসন গাজীপুর শাখার ৭২/ম কেন্দ্রের সদস্য হন হ্যাপি আক্তার। তিনি খুঁজে পান নতুন এক আলোর পথ।

হ্যাপি আক্তার বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শুরুতে আমি পাঁচ হাজার টাকা সহজ ঋণ নিয়ে স্থানীয় গার্মেন্ট, গ্যারেজ ও কারখানায় ২০-২৫ জনের তিনবেলা খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করি। নিজে বাজার করে নিজেই রান্না করি। আস্তে আস্তে আমার তৈরি খাবারের চাহিদা বাড়তে থাকে। এরপর গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আরও ঋণ নিতে থাকি। এভাবে আমার ব্যবসার পরিধি আরও বাড়তে থাকে।’

দুই মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে দিয়েছেন হ্যাপি। ছোট ছেলেটি এখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। এখন আর খানাখন্দের সেই জমিটি নেই। বাড়ির তিন কাঠা জমি সম্পূর্ণ মাটি ভরাট করে পাঁচটি দোকান এবং দুই শতক জমির ওপর তিনতলা বিল্ডিং করেছেন। আর এ সবই তিনি করেছেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে ঋণ গ্রহণ করে।

হ্যাপি আক্তার আরও বলেন, ‘বাড়িঘর নির্মাণের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গৃহঋণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা নিই। রান্না ও খাবার সরবরাহের কাজ ছেড়ে দিয়ে চারটি দোকান ভাড়া দিয়েছি, আর একটি দোকানে নিজেই ব্যবসা করি। বাড়ির নিচতলা ও তিনতলা ভাড়া আর দোকানের ভাড়া মিলিয়ে মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা থাকে। ভবিষ্যতে আমার ইচ্ছা আছে আরও বড় ঋণ নিয়ে ব্যবসাটা বাড়ানোর।’

হ্যাপি আক্তার প্রসঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংক গাজীপুর জোনের জোনাল ম্যানেজার বলেন, ‘বর্তমানে তার সহজ ঋণ রয়েছে ৬০ হাজার টাকা এবং বিশেষ বিনিয়োগ ঋণ রয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। চলমান ঋণ রয়েছে দুই লাখ টাকা। এ পর্যন্ত মোট ঋণ নিয়েছেন ৩২ লাখ টাকা।

তিনি আরও বলেন, ‘হ্যাপি আক্তার গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসার কাজে লাগিয়েছেন। এছাড়া একটি তিনতলা বাড়ি করেছেন, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা। নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের গাজীপুর জোনের বাসন গাজীপুর শাখার ৭২/ম কেন্দ্রের ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছেন এখানকার প্রায় ৯০ ভাগ ঋণগ্রহীতা। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন তারা।

দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা প্রসার, স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উদ্যোক্তা তৈরি এবং পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক। নোবেলবিজয়ী এই প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে সহজ (আয়বর্ধক) ঋণ, বিশেষ বিনিয়োগ ঋণ, গৃহ ঋণ, সংগ্রামী (ভিক্ষুক) সদস্য ঋণ, পশু ঋণ, শস্য ঋণ, মৌসুমি ব্যবসা ঋণ ও পুঁজিসহায়ক ঋণ। এছাড়া ঋণগ্রহীতাদের সন্তানদের জন্য রয়েছে উচ্চশিক্ষা ঋণ, নার্সিং শিক্ষা ঋণ, ছাত্র-ছাত্রী বৃত্তি, নবীন উদ্যোক্তা ঋণ প্রভৃতি। কোনো রকম জামানত ছাড়াই এসব ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। দেশের ৮১ হাজার ৬৭৮টি গ্রামে এক কোটির অধিক গ্রাহকের কাছে সেবা পৌঁছে দিচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০