Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 7:11 pm

সংবাদ সম্মেলন কেএসআরএম পিএইচপির

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: ‘পিএইচপি গ্রুপের কাছে কোনো জমির লিজ হস্তান্তর করিনি। গত বছর কেএসআরএমের কাছে জমি লিজ দিয়েছিলাম। তাই এটি নিয়ে কোনো বিরোধ থাকতে পারে না।’ ভূমি লিজ হস্তান্তরকারী নুরুল আলমের বক্তব্য এটি। কেএসআরএম গ্রুপের করপোরেট অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্য রাখেন ভূমির লিজ হস্তান্তরকারী। এ সময় গ্রুপটির সিইও মেহেরুল করিম ছাড়াও শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাড়বকুণ্ডের রেলওয়ের এক একর ৬৪ শতাংশ জমি নিয়ে দেশের বৃহৎ দুই শিল্পগ্রুপ কেএসআরএম ও পিএইচপির চলমান বিরোধের জেরে মুখ খোলেন এ ভূমি হস্তান্তরকারী। জমি নিয়ে বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে চট্টগ্রামের দুই গ্রুপ কেএসআরএম ও পিএইচপি।

সংবাদ সম্মেলনে কেএসআরএম গ্রুপের সিইও মেহেরুল করিম বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে বাড়বকুণ্ডের রেলওয়ের এক দশমিক ৬৪ একর জমির লাইসেন্সপ্রাপ্ত হন স্থানীয় নুরুল আলম। সেই থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভূমি লাইসেন্স ও ভ্যাট পরিশোধ করে ভোগদখল করে আসছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে নুরুল আলম কৃষিকাজে অপারগতা প্রকাশ করলে কেএসআরএমের পরিচালক সেলিম উদ্দিন রেলওয়ের কাছে জমিটি লিজ নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। পরে ত্রিপক্ষীয় শুনানির মাধ্যমে পরিচালক সেলিম উদ্দিনের নামে লাইসেন্স প্রদান করেন, হালনাগাদ লাইসেন্স ফি ও ভ্যাট প্রদানের মাধ্যমে সেলিম উদ্দিন যার ভোগ দখলে আছেন।

কেএসআরএম গ্রুপের রেলওয়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ভূমি সম্পর্কে পিএইচপি গ্রুপের বক্তব্য অসত্য দাবি করে তিনি বলেন, কেএসআরএম গ্রুপ ৩৩ বছরেরও অধিক সময় ধরে বাংলাদেশে প্রচলিত সব আইনকানুন মেনে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আজ পর্যন্ত গ্রুপটির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা জমি দখলের কোনো অভিযোগ কেউ কখনোই উত্থাপিত করতে পারেনি। আর পিএইচপি গ্রুপের কেনা জমি বলে যেটি প্রচার করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অসত্য ও ভিত্তিহীন। আর জায়গার সীমানা বেড়ায় বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অপপ্রচার।

সিইও মেহেরুল করিম আরও বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে এমন একটি গ্রুপটি কি মাত্র এক দশমিক ৬৪ একর জমি দখল করবে। তা হাস্যকর। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে রেলওয়ের সার্ভেয়ার টিম এবং সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরেজমিনে জমিটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে এ বিষয়ে কোনো ধরনের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদি অনুরূপ কোনো সশস্ত্র সন্ত্রাসী লোকজন অবস্থান করত তাহলে অবশ্যই প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করত। এর আগে চেম্বারের স্থানীয় এমপি এম লতিফের মধ্যস্থতায় এটি সমাধানের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেখানেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেনি পিএইচপি। এছাড়া বিষয়টি সমাধানের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফজলে করিমের মাধ্যমে আরেকটি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভূমি লিজ হস্তান্তরকারী নুরুল আলম বলেন, আমি পিএইচপি গ্রুপের কাছে কোনো জমির লিজ হস্তান্তর করিনিÑআমি গত বছর কেএসআরএমের কাছে করেছি। আর এটি নিয়ে কোনো বিরোধ থাকতে পারে না।

অন্যদিকে একই দিনে পিএইচপি গ্রুপের পিএইচপি ফ্লোটগ্লাস কারখানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, আমাদের কারখানার পেছনেই ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন। রেললাইন পেরিয়ে ১৬০ একর নিজস্ব জমিতে বিলুপ্তপ্রায় বনজ ও ফলদ গাছের বাগান সৃজন করেছে পিএইচপি। ওই বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির এক লাখ ছয় হাজার ৯৩৭টি গাছ রয়েছে। আর কারখানা থেকে বাগানে যাওয়ার জন্য ২০০৫ সালেই রেলওয়ের একটি জায়গা ইজারা নেয় পিএইচপি। কিন্তু ওই জায়গার পাশে রেলওয়ে থেকে জমি ইজারা নেওয়ার দাবি করে গত ২৯ মার্চ পুরো জায়গা ঘিরে ফেলে কেএসআরএম, এমনকি রেলওয়ে থেকে ইজারা নেওয়া পিএইচপির জায়গাটিও। তারা পিএইচপি ফ্লোটগ্লাস কারখানার পেছন থেকে বাগানে যাওয়ার পথটিও বন্ধ করে দেয়। অথচ এ ছোট একটি জায়গা নিয়ে তাদের কী আগ্রহ তা বুঝলাম না।

সীতাকুণ্ডে আনোয়ারা জুট মিলস এলাকায় অবস্থিত জায়গাটি স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলমের কাছ থেকে ১৯৬৪ সালে রেলওয়ে অধিগ্রহণ করে। পরে জায়গার তৎকালীন মালিকের পৃথক ওয়ারিশরা সেটি আবার লিজ নিয়ে একপক্ষ পিএইচপিকে লিজ দেয়। পরে অন্য এক ওয়ারিশ কেএসআরএমের কাছে দখলস্বত্ব বিক্রি করে। এজন্য পিএইচপি ও কেএসআরএম উভয়পক্ষই জায়গাটি তাদের বলে দাবি করছে।

উল্লেখ্য, কয়েক মাস ধরে সীতাকুণ্ডে আনোয়ারা জুট মিলস এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী শাহজাহানের মালিকানাধীন কেএসআরএম ও নড়ালিয়া এলাকায় অবস্থিত আরেক চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সুফি মিজানের মালিকানাধীন পিএইচপি গ্লাস ফ্যাক্টরির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধপূর্ণ জায়গাটি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার উভয় শিল্পগ্রুপের মাঝে চরম উত্তোজনা দেখা দেয়। এ বিরোধের জের ধরে দুই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আনসার সদস্যদের মধ্যে গত ২৯ মার্চ গুলি বিনিময় ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ-সংক্রান্ত একটি সংবাদ শেয়ার বিজেও প্রকাশিত হয়।