এটিএম সেলিম সরোয়ার, জয়পুরহাট : এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে পরের এক ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। এ অবস্থায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ নিয়ে অতিষ্ঠ জয়পুরহাটবাসী। চাহিদামাফিক জেলার সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা থাকলেও সেই সুবিধা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। গত সোমবার ছয়বার বিদ্যুৎবিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে জেলাজুড়ে।
এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলায় ২০টি হিমাগারে প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন সংরক্ষিত আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা।
জয়পুরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির আওতায় জেলা সদরসহ পাঁচটি উপজেলায় কয়েক লাখ আবাসিক গ্রাহকসহ শিল্পকারখানা, হাসপাতাল-ক্লিনিক, সেচ ও বাণিজ্যিক মিলে বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহক রয়েছে। জেলাজুড়ে পাঁচটি ফিডে এসব গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৫০ মেগাওয়ার্ট। সে মোতাবেক বিদ্যুৎও দেয়া হয় গ্রাহকদের। অথচ কয়েক দিন ধরে চাহিদার চেয়ে ১৯ থেকে ২০ মেগাওয়াট কম পাওয়ায় গ্রাহকরা তাদের বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। বিদ্যুৎবিভ্রাটে সরবরাহ অনেক সময় বন্ধ রাখা হয়।
এদিকে লোডশেডিংয়ে চলতি মৌসুমে জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলায় ২০টি হিমাগারে প্রায় ২০০ মেট্রিক টনের বেশি আলুর ভবিষ্যৎ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সংরক্ষণ করা আলুর মধ্যে অর্ধেক পরিমাণ বীজ আলু রয়েছে। চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ না পাওয়ায় তারা জেনারেটর দিয়ে হিমাগার সচল রেখেছে।
কালাই আহলে হাদীস মসজিদ মার্কেট কমিটির সভাপতি মাসুদার রহমান হিটলার বলেন, ঈদের সামনে যেভাবে বিদ্যুৎ যাতায়াত করছে, তাতে বেচাবিক্রি একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। গরমের কারণে ক্রেতারা মার্কেটে প্রবেশ করছেন না। এতে বিপাকে পড়েছি আমরা ব্যবসায়ীরা।
কালাই উপজেলার পুনট পাঁচপাইকা গ্রামের আলুচাষি মিঠু ফকির বলেন, পুনট কোল্ড স্টোরেজে প্রায় পাঁচ হাজার বস্তা আলু রেখেছেন। এরই মধ্যে দুই হাজার বস্তা বীজ আলু আছে। যেভাবে লোডশেডিং চলছে, তাতে সংরক্ষণ করা আলু পচে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
পুনট স্টোরেজের ব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার বলেন, সংরক্ষণকৃত আলু রক্ষার্থে যে সময়ে বিদ্যুৎ থাকছে না, সে সময় ডিজেলচালিত জেনারেটর চালু রাখতে হচ্ছে। এতে ব্যয় বাড়ছে বটে, কিন্তু বিদ্যুতের মতো হিমাগারের ভেতরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে আলু পচে যাওয়ার শঙ্কাই থাকে।
জয়পুরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) প্রকৌশলী এনামুল হক প্রামাণিক জানান, প্রতিদিন জয়পুরহাটে বিদ্যুতের চাহিদা ৫০ মেগাওয়াট। কিন্তু কয়েক দিন ধরে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাসের চাপের কারণে ১৯ থেকে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সে কারণেই লোডশেডিং করতে হচ্ছে।