Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:09 am

সংরক্ষিত বনভূমি রক্ষায় উদ্যোগ নিন

শিল্পায়ন, সড়ক অবকাঠামো, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান স্থাপন প্রভৃতি নানা কারণে দেশে বৃক্ষ কর্তন তথা বনাঞ্চলের স্থায়ীভাবে সমাপ্তি হচ্ছে। বিগত শতাব্দীতে বিশ্বজুড়ে বনাঞ্চল উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, প্রতি বছর আনুমানিক ১৮ মিলিয়ন একর বন ধ্বংস হয়। একটি দেশে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। আমাদের দেশে বনভূমি এর চেয়ে অনেক কম আছে, এটি পুরোনো খবর। বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৪ শতাংশ বন উজাড় করার জন্য প্রাণিসম্পদ দায়ী বলে মনে করা হয়। কৃষকরা প্রায়ই গাছ কেটে জমি পরিষ্কার করে এবং তাদের পশুপাখি ও খাবার বাড়ানোর জন্য পুড়িয়ে ফেলে। মাটির পুরোপুরি অবনতি না হওয়া পর্যন্ত তারা সম্পত্তি ব্যবহার করতে থাকে এবং নতুন উড়ানের জমিতে একই প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করে।

বুধবার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত ‘বারংবার আগুন সন্ত্রাসের কবলে সুন্দরবন: কারণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, কঠোর তদারকির অভাবে সুন্দরবন পুড়ে ছাই হচ্ছে। সংগঠনটির তথ্যমতে, গত ২২ বছরে সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে ৩২ বার আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়েছে শতাধিক একর বনভূমি। সর্বশেষ গত ৪ মে বেলা ১১টায় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় আগুন লেগে বন বিভাগের হিসেবেই পুড়ে যায় ৭ দশমিক ৯ একর বনভূমি।

একদিকে অবৈধভাবে দখল করে নেয়া সংরক্ষিত বনভূমি উদ্ধারে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ (সর্বাত্মক অভিযান) শুরু করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে; অন্যদিকে সরকারের  উদাসীনতায় বন উজাড় হচ্ছে। বনভূমি দখলের যে চিত্র প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে আসে, তা দেখে ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে, বনভূমি তদারকি ও সংরক্ষণে দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয়ের যথাযথ দৃষ্টি ও মনোযোগের ঘাটতি রয়েছে। কেন বারবার সুন্দরবনে আগুন লাগছে, সরকার কি তা খতিয়ে দেখেছে কখনও!

জাতিসংঘের বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রতিটি রাষ্ট্রে মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে বনভূমি উজাড় হতে হতে এখন ১৫ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে; অবশ্য এ হিসাব বন বিভাগের। বেসরকারিভাবে ধারণা করা হয়, আমাদের দেশে এখন প্রকৃত বনভূমির পরিমাণ এর চেয়ে কম।

এত দিন বলা হতো, বেদখলে থাকা বনভূমির এক লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর সংরক্ষিত বনভূমি। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দখলেও আছে শত শত একর। রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী শিবির নির্মাণ করতে অসংখ্য বন ও গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। অবৈধ দখলদার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করা  হয় না, কিংবা বারবার অগ্নিকাণ্ডে বনভূমি উজাড়ের তদন্ত করে না দেখা দুঃখজনক।  

দেশকে বর্তমান জনগোষ্ঠীর ও ভবিষ্যৎ প্রজšে§র জন্য বাসোপযোগী টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণে বনভূমি সংরক্ষণের বিকল্প নেই। টেকসই পরিবেশ ও বন উন্নয়নে প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশকে বাসযোগ্য করতে নির্মল বায়ু, জীববৈচিত্র্য ও জীব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলেই প্রত্যাশা।