চলতি অর্থবছরের ব্যাংকঋণ

সংশোধিত লক্ষ্যের চেয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা বেশি নিয়েছে সরকার

শেখ আবু তালেব: অর্থের চাহিদা মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে চলেছে সরকার। শুধু চলতি অর্থবছরেই (২০১৯-২০) সরকারের ব্যাংকঋণ নেওয়ার পরিমাণ ৮৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে চলেছে। এটি সরকারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।

অপরদিকে ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া সরকারের ঋণ এরই মধ্যে দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত রাজস্ব আদায় কমে যাচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায়। এজন্য সরকারের দৈনন্দিন কার্য পরিচালনায় ঋণ নিতে হচ্ছে ব্যাংক খাত থেকে।

যদিও ব্যাংক খাত থেকে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, করোনাকালীন অর্থায়নের দায়িত্ব ব্যাংকের ওপরই বর্তাচ্ছে। এ পরিস্থিতি আরও ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করবে।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের কয়েক মাসের মধ্যেই এ লক্ষ্যামাত্রা ছাড়িয়ে যায় সরকার। অতিরিক্ত ঋণের চাহিদা দেখে লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হয়। নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭২ হাজার ৯২০ কোটি টাকা।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের গত ৩১ মে পর্যন্ত সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ৭৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের এক মাস বাকি থাকতেই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অতিক্রম করে সরকারের ব্যাংকঋণ।

চলতি অর্থবছরের গতকাল (১০ জুন) পর্যন্ত সরকারের ব্যাংকঋণ নেওয়ার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, চলতি জুন মাসের জন্য সরকার মোট ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার ঋণ চাহিদা দিয়েছে।

অর্থের সংকট থাকলে সাধারণত আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকে ঋণ চাহিদা দিয়ে থাকে সরকার। এবারও তাই করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ নেওয়ার গতিপ্রকৃতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, জুন মাসের চাহিদার পুরোটাই নেবে সরকার। এতে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হবে।

সরকারের অতিরিক্ত ব্যাংকঋণ-নির্ভরতা জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) কারণে অর্থনীতি বিপর্যস্ত। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যাংক খাতকে। এখন সরকার যদি আরও ঋণ নেয়, তাহলে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিবে। অপরদিকে বেসরকারি খাতেও ঋণপ্রবাহ কমে যাবে। ফলে উৎপাদনশীল খাতে ঋণ যাবে না, যা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এদিকে সরকারের ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ বর্তমানে দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, দেশের ব্যাংক খাতের কাছে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ হচ্ছে এক লাখ ৯৫ হাজার ৭৮৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

তিনি বলেছেন, সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংক থেকে ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৬২৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এ সময়ে ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ এ সময়ে নিট ঋণ এক লাখ ৯৫ হাজার ৭৮৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ঋণের এই পরিমাণ বর্তমানে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০