শেয়ার বিজ ডেস্ক: সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল তাণ্ডব ও সন্ত্রাসীদের রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সংসদ সদস্য লিটন। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকেও তার এলাকায় প্রবেশ করতে দেননি। এটাই হয়তো ছিল লিটনের বড় অপরাধ। এলাকার মানুষের শান্তি ও স্বস্তি নিশ্চিত করেছিলেন বলেই হয়তো তাকে এভাবে অকালে জীবন দিতে হলো। এ হত্যাকাণ্ড অবশ্যই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে কঠোর অবস্থা নিয়েছি, তেমনিভাবেই লিটন হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। খবর বাসস।
গতকাল দশম জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে আলোচনায় আরও অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বি মিয়া, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জুনাইদ আহমেদ পলক, হুইপ মাহবুব আরা গিনি, একেএম শামীম ওসমান, মীর শওকত আলী বাদশা ও জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ।
বক্তাদের বেশিরভাগই হত্যার শিকার মনজুরুল ইসলাম লিটনকে নিয়ে গণমাধ্যমের কিছু ভূমিকার সমালোচনা করেন। আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাইবান্ধাসহ পুরো উত্তরাঞ্চলই বিএনপি-জামায়াত জোট সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে গাইবান্ধাসহ আশপাশের এলাকায় প্রচণ্ড সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায় জামায়াত-শিবির ও বিএনপি সন্ত্রাসীরা। পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ চালিয়ে চার পুলিশ সদস্যকে পুড়িয়ে হত্যা করে তারা। সেখানে আওয়ামী লীগের এক থেকে দেড় হাজার সদস্যের বাড়ি-গাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলাসহ অগ্নিসংযোগ করেছিল জোট সন্ত্রাসীরা। সংসদ সদস্য লিটনের নির্বাচনী এলাকা জামায়াত অধ্যুষিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন বানচালের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র নিয়ে হাজার হাজার গাছ কেটে রাস্তায় অবরোধ করে সারা দেশের মতো ওই এলাকাতেও বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। যখন ওই এলাকার জনগণ বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুললো, তখন এমপি হিসেবে নয় একজন এলাকার সাধারণ মানুষ হয়ে মনজুরুল ইসলাম লিটন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
শিশু সৌরভ গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়ে ওই সময় কিছু গণমাধ্যমের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্য লিটন কেন একটি শিশুকে গুলি করবে? শিশু সৌরভের পরিবারও তো আওয়ামী লীগ করতো। লিটনকে হত্যার জন্য ওই সময় অ্যামবুশ করে বসেছিল। এটা দেখে লিটন নিজের জীবন বাঁচাতেই ফাঁকা গুলি করেন। এটা নিয়ে কিছু পত্র-পত্রিকা এমনভাবে লিখলো, কিন্তু কেউ সত্য ঘটনাটি লিখলো না। তিনি বলেন, লিটন বার বার বলছিলেন যেখানেই যাই, সেখানেই নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই দিতে হয়। নইলে আমাকে মেরে ফেলা হবে। কিন্তু তার স্ত্রীসহ সবার অস্ত্র সিজ করা হলো। নির্বাচনের কথা বলে পুলিশের নিরাপত্তাও তুলে নেওয়া হলো। এ সুযোগেই হত্যাকারীরা বাড়িতে ঢুকে নির্মমভাবে লিটনকে হত্যা করে।
বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ড, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব ঘটনা তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে এগুলোর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোটই জড়িত ছিল। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। লিটন গোলাম আযমকে তার এলাকায় নামতে দেননি। এরই যেন প্রতিশোধ নেওয়া হলো। যেখানেই আওয়ামী লীগের কেউ শক্ত হয়ে দাঁড়াচ্ছেন, তাদেরই হত্যা করা হচ্ছে।
সংসদ সদস্যদের প্রবল দাবির মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, গোয়েন্দাদের একটি চৌকস দল ছাড়াও পুলিশ বাহিনী খুনিদের ধরতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। অবশ্যই হত্যাকারী ও মূল পরিকল্পনাকারীদের ধরে তাদের মুখোশ জাতির সামনে উম্মোচন করা হবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকায় লিটনকে রাজনীতি করতে হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস-নাশকতা এবং চার পুলিশ হত্যার বিরুদ্ধে লিটন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এটাই ছিল যেন তার অপরাধ। তিনিও দ্রুত খুনিদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত লিটন হত্যার জন্য বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে দায়ী করে বলেন, সন্ত্রাস-নাশকতা-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গেছেন লিটন। এ হত্যার মূল নায়ক হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট ও তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া। এজন্য অবশ্যই তাকে জবাব দিতে হবে। অগণতান্ত্রিক অপশক্তির নেত্রীই হচ্ছেন খালেদা জিয়া।
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই লিটনকে হত্যা করা হয়েছে। একটি শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়ে দেশের মিডিয়া যেন লিটনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
Add Comment