নিজস্ব প্রতিবেদক: কমার্স ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মামলায় নীলফামারীর সংসদ সদস্য মো. শওকত চৌধুরীর জামিন বহাল রাখতে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার শর্ত দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছিলেন আপিল বিভাগ। ওই আদেশের ওপর শওকত চৌধুরীর করা আপিল আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল (রোববার) ওই আদেশ স্থগিত করেন দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
আপিল বিভাগে শওকত চৌধুরীর পক্ষে শুনানি করেন পঞ্চগড়-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজন, আইনজীবী এএম আমিনউদ্দীন ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান ও কমার্স ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন এম সারোয়ার হোসেন।
খুরশীদ আলম খান পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দিতে পারেন কি না, তা পরীক্ষা করে দেখবেন আপিল বিভাগ। এজন্যই হাইকোর্টের আদেশটি দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।’
এর আগে গত ২২ অক্টোবর (রোববার) বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মামলায় নীলফামারীর সংসদ সদস্য মো. শওকত চৌধুরীর জামিন বহাল রাখতে ২৫ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার শর্ত দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ে পরবর্তী ৫০ দিনের মধ্যে এ অর্থ জমার নির্দেশও দেওয়া হয়। টাকা জমা না দিলে শওকত চৌধুরীর জামিন বাতিল হবে বলেও আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০১৬ সালের ৮ ও ১০ মে শওকত চৌধুরীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে বংশাল থানায় দুটি মামলা করে। এর মধ্যে এক মামলায় ৯৩ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ২১৩ টাকা ও অপর মামলায় ৮২ লাখ ৮৯ হাজার ৮১৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, শওকত চৌধুরী তিনটি কোম্পানির নামে ৩৪টি এলসি খুলে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের বংশাল শাখা থেকে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি ড. আসাদুজ্জামান, বংশাল শাখার ম্যানেজার হাবিবুল গণিসহ আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে ওই অর্থ আত্মসাৎ করেন। বর্তমানে ওই অর্থের পরিমাণ সুদে-আসলে বেড়ে ১৩৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
কমার্স ব্যাংকের আইনজীবী সারোয়ার হোসেন জানান, এ দুই মামলায় গত বছরের আগস্টে হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন নেন শওকত চৌধুরী। পরে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে আবারও জামিন পান। এ অবস্থায় ওই দুই মামলার অপর দুই আসামি আসাদুজ্জামান ও হাবিবুল গণি জামিনের আবেদন করলে গত বছর ২৪ নভেম্বর তার শুনানিতে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। ওই রুলে শওকতকে নি¤œ আদালতের দেওয়া জামিন কেন বাতিল করা হবে নাÑতা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর চ‚ড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল রোববার আদালত শওকত চৌধুরীকে জামিন বাঁচানোর জন্য টাকা জমা দেওয়ার শর্ত ঠিক করে রায় দেন।