সংস্কারের অভাবে জীর্ণ দশা বাবা আদম মসজিদের

শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ: আরব দেশে জন্মগ্রহণ করেও ইসলাম ধর্ম প্রচারে সেন শাসনামলে ১১৭৮ সালে ধলেশ্বরীর তীরে মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমে আসেন  আধ্যাত্মিক সাধক বাবা আদম।   তখন বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জ ছিল বল্লাল সেনের রাজত্বে। ওই বছরই বল্লাল সেনের হাতে প্রাণ দিতে হয় তাকে।

মুন্সীগঞ্জে সুফি সাধক বাবা আদম শহীদ হওয়ার প্রায় ৩০০ বছর পর তার স্মৃতি রক্ষার্থে ১৪৮৩ সালে বাংলার সুলতান জালাল উদ্দিন আবু জাফর শাহের ছেলে মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের শাসক মালিক কাফুর শাহ্ ছয় গম্বুজবিশিষ্ট একটি কারুকার্যখচিত নয়নাভিরাম মসজিদ নির্মাণ করেন। সেই থেকে ৫৪০ বছর ধরে ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে এই মসজিদটি। কিন্তু মুসলিম ঐতিহ্যের চোখজুড়ানো এই শৈল্পিক স্থাপনার গায়ে এখন শুধুই অযত্ন-অবহেলার ছাপ।

জানা যায়, আরবের তায়েফে ১০৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন সুফি সাধক বাবা আদম। পরে আধ্যাত্মিক জ্ঞান সাধনায় বড় পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) এর সাহচর্য পেতে ইরাকের বাগদাদে আসেন। ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য ১১৫২ সালে ১২ জন আউলিয়া নিয়ে মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম পৌরসভার দরগাবাড়ি এলাকায় আসেন। পরে ১১৭৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের রাজা বল্লাল সেনের হাতে প্রাণ দিতে হয় তাকে।

বাবা আদম (র.)-এর মাজারের পশ্চিম-উত্তর পাশে ১৪৭৯ সালে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৪৮৩ সালে এ মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।

সেই থেকে ৫শ বছর ধরে ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে এ মসজিদটি। তবে সংস্কারের অভাবে অনেকটাই ম্লান ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি।

মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে চার কিলোমিটার পথ পেরোলেই বাবা আদম মসজিদ। রাজধানী ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে সড়কপথে মসজিদের দূরত্ব মাত্র ২৮ কিলোমিটার। ঢাকার সদরঘাট থেকে নৌপথে মিরকাদিম লঞ্চঘাটে নামার পর আধা কিলোমিটারের মধ্যেই ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটিতে আসা যাবে।

ছয় গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের নির্মাণশৈলী মনোমুগ্ধকর। এটি দৈর্ঘ্যে ৪৩ ফুট ও প্রস্থে ৩৬ ফুট। দেয়াল প্রায় চার ফুট চওড়া। ভেতরে ইট-সুরকির গাঁথুনি। নির্মাণ নকশা বা স্থাপত্যকলা অনুযায়ী মসজিদ ভবনটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। সম্মুখের দিকে খিলান আকৃতির প্রবেশপথ। দুই পাশে সম আকারের দুটি জানালা। মসজিদের সামনে ওপরের দিকে রয়েছে ফারসি ভাষায় খোদাই করা কালো পাথরের ফলক।

মসজিদের ভেতরে ঢুকে সামনে গেলে চার কোনায় চারটি ত্রিভুজাকৃতির স্তম্ভ চোখে পড়ে। মসজিদের খিলান, দরজা, স্তম্ভের পাদদেশ, মেঝে ও ছাদের কার্নিশের নিচে ইট কেটে মুসলিম স্থাপত্যকলার অপূর্ব নকশাও লক্ষ করা যায়।

বাবা আদম মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন রেনু বলেন, বাবা আদমের নামে নির্মিত এ মসজিদটি দেখতে বছরজুড়ে দরগাবাড়িতে দেশ-বিদেশে থেকে পর্যটক ও দর্শনার্থীরা আসেন। তবে পর্যটকদের আকর্ষণ ধরে রাখা কিংবা কয়েকশ বছরের ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে টিকে থাকা এ স্থাপনাটি সংরক্ষণে নেই তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উচিত দ্রুত এটি মেরামত ও সংরক্ষণ করা।

বাবা আদম মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, ৫শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি সংস্কারের অভাবে এর ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

বাবা আদম মসজিদের মোয়াজ্জেম হাফিজ মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম জানান, এ মসজিদে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে আসেন। কিন্তু বৃষ্টি হলে মসজিদের ছাদ দিয়ে চুইয়ে পানি পড়ে ভেতরের মেঝে নষ্ট হয়ে যায়। মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে কষ্ট হয়ে যায়। সীমানার রেলিংয়ে মরিচা ধরে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেয়ালের ইট খসে পড়ে যাচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি দ্রুত এ মসজিদটি মেরামত ও সংরক্ষণ করা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০