সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রহ্মপুত্র নদের ৭৮ কিলোমিটার বাঁধ

জাভেদ হোসেন, গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুর ইউনিয়ন থেকে সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী ইউনিয়ন পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী প্রায় ৭৮ কিলোমিটার বাঁধ চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির প্রায় ১০০টি স্থানে বড় ধরনের ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রতিদিন ওই বাঁধের ওপর দিয়ে চলাচলকারী স্থানীয় অধিবাসীরা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এছাড়া আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এজন্য অবিলম্বে বাঁধটি সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, জেলাকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে ১৯৬২ সালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকে সাঘাটা উপজেলা পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে বর্ষা মৌসুমে গাইবান্ধা জেলার অধিবাসীরা বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেছেন, বাঁধটির ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের সিংড়িয়ায় ২০১৬ সালে প্রায় ২০০ মিটার অংশ ভেঙে যায়। এতে ফুলছড়ি, সাঘাটা, গাইবান্ধা সদর ও পলাশবাড়ী উপজেলার ১৫টিরও বেশি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েন পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার একর জমির ফসল, রাস্তাঘাট, সেতু-কালভার্টসহ অসংখ্য স্থাপনা। তার পরও বাঁধটি মেরামতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রতিবছর বন্যার সময় হলে শুধু বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করা হয়। এর বাইরে শুষ্ক মৌসুমে এ বাঁধ রক্ষায় স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়া গত বছরের বন্যায় বাঁধটির আরও অসংখ্য স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে পুরো বাঁধটি ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধটির ৭৮ কিলোমিটারের মধ্যে ৫০ কিলোমিটারেরও বেশি অংশের অবস্থা একবারেই বেহাল হয়ে পড়েছে। মাত্র ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার অংশ কিছুটা ভালো অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টি ও বন্যার কারণে বাঁধের অসংখ্য স্থান নিচু হয়ে গেছে। ফলে এসব অংশের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সাইকেল-মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যানসহ ছোট আকৃতির যানবাহন চলাচল করছে।
বাঁধের পার্শ্ববর্তী এলাকার অধিবাসীরা জানান, শুধু বন্যার সময়েই বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙনরোধে চেষ্টা করা হয়। বন্যা পেরিয়ে গেলে আর কাউকে এ এলাকায় দেখা যায় না। বর্তমানে অনেক স্থানে বাঁধের মাটি ধসে যাওয়ায় চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়া আসন্ন বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে তাদের মধ্যে শঙ্কাও বাড়ছে বলে তারা জানিয়েছেন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে,
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনরোধ ও বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি চলাচলের জন্য ব্রহ্মপুত্র নদে ড্রেজিং এবং জেলাকে বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি মেরামতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে নদের ডান তীরের ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট এলাকায় এক হাজার তিনশ’ মিটার, সিংড়িয়া-রতনপুর-কাতলামারী এলাকায় দুই হাজার দুইশ মিটার ও গজারিয়ার গণকবর এলাকায় ৭০০ মিটার এবং সদর উপজেলার বাগুড়িয়া এলাকায় তিনশ মিটার স্থায়ী (সিসি ব্লক দ্বারা) সংরক্ষণ করা হবে।
এছাড়া ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ১০ দশমিক ২২ কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করা হবে। এ মেগা প্রকল্পের আওতায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ কিলোমিটার অংশ মেরামত করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন দ্রব্যাদি ক্রয়সহ অন্যান্য কাজে আনুষঙ্গিক ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, এসব কাজের টেন্ডার করা হয়েছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া বাঁধের অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো পরে বিভিন্ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে মেরামত করা হবে বলেও জানান তিনি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০