ব্যাংক খাত সংস্কারের লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। টাস্কফোর্স আর্থিক খাত বিষয়ে অভিজ্ঞ ছয়জনকে সদস্য করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক হিসেবে থাকবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। ব্যাংক খাত সংস্কারে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এই টাস্কফোর্স। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, টাস্কফোর্স প্রধানত আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে ব্যাংকিং খাতের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি, মন্দ সম্পদ, প্রধান ঝুঁকিগুলো নিরূপণ করবে। এছাড়া দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচক পর্যালোচনা, ঋণের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ, নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি নিরূপণ, তারল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা, নিট মূলধন নির্ণয়, সম্পদের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মন্দ সম্পদকে পৃথকীকরণ-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
ব্যাংক খাতে অব্যস্থাপনা ও দুর্নীতি বন্ধে যেসব বাধা রয়েছে, সে বাধাগুলো দূর করতে পারলে ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা আনয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা অসম্ভব নয়। ব্যাংকের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরাতে এবং ব্যাংককে লাভজনক করতে বড় ভূমিকা ব্যাংকারদেরই। তারা সচেতন ও দায়িত্বশীল হলে অর্থ পাচারসহ ব্যাংক খাতে সংঘটিত অনিয়ম কমবে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক নিয়ে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তিক্ত হলেও সেটি নিয়ে তেমন সোচ্চার নয়। তবে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে যাওয়া, কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে গণমাধ্যমের বিভিন্ন নেতিবাচক তথ্য থেকে ব্যাংকারদের বিষয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা ইতিবাচক নয়।
আমরা মনে করি, ব্যাংক খাতের সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স কর্মপরিধিভুক্ত বিষয় ছাড়াও ব্যাংক খাতের অন্য দুর্বলতাও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় একটি তথ্যভাণ্ডার করা যেতে পারে। তা হলে কোনো ধুরন্ধর ব্যবসায়ী অনিয়ম করার সুযোগ পাবেন না। এক ক্লিকেই তথ্যভাণ্ডারের প্রয়োজনীয় জানা সম্ভব হবে। যেন কোনো ঋণ তথ্যই গোপন না থাকে। টাস্কফোর্স আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন যেমন ব্যাংক কোম্পানি আইন, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ইত্যাদির সংস্কার এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি, ব্যাংক অধিগ্রহণ ও একীভূতকরণ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন, সংস্কার ও যুগোপযোগীকরণের প্রস্তাব দেবে এবং ব্যাংকিং খাতের শ্বেতপত্র প্রকাশের পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু এমন যেন না হয় টাস্কফোর্সও কাজ করবে, অনিয়ম দুর্নীতিও সমানতালে চলতে থাকবে।
সুশাসন ও জবাবদিহি যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ। কয়েক বছর ধরে দেশের ব্যাংক খাতে সুশাসন ও জবাবদিহি আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা প্রভৃতি দেখে এখন সাধারণ মানুষও ব্যাংক খাতের দুর্বলতা বোঝেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় সংঘটিত হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি এবং অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট গ্রুপ প্রভৃতি নিয়ে ব্যাংক খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থায় চিড় ধরিয়েছে। এরপরও অতি সম্প্র্রতি ব্যাংক খাতে নতুন কাণ্ড ও লুটপাট সংঘটিত হয়েছে, যেক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনা নতুন করে সামনে আসে। টাস্কফোর্সগুলো এমন অনিয়ম লুটপাট চিরতরে বন্ধে ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে বলেই প্রত্যাশা।