নজরুল ইসলাম: সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কিউ এম ইকরাম উল্লাহ ও তার স্ত্রী আতিকা খাতুনের অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্পদ বিবরণীতে ইকরাম উল্লাহ তিন কোটি ৬৭ লাখ দুই হাজার ২০৬ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ তিন কোটি ৫২ লাখ ৬৮ হাজার ১০১ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ তিনি অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। অবৈধভাবে অর্জিত দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা গোপন করতে ব্যাংক থেকে উত্তোলনের মাধ্যমে স্থানান্তর করেছেন।
তার স্ত্রী আতিকা খাতুন সম্পদ বিবরণীতে নিজ নামে ছয় কোটি ২২ লাখ ২১ হাজার ৯২৬ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ আট কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ১১৮ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন।
মামলার এজাহার থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তাদের দুজনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। গত ১৩ জানুয়ারি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) উপপরিচালক রাশেদুল ইসলাম মামলা দুটি দায়ের করেন। ১২ জানুয়ারি মামলা দায়েরের অনুমোদন দেয় দুদক কমিশন। পরে সহকারী পরিচালক মানসি বিশ্বাসকে মামলা দুটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট এ কিউ এম ইকরাম উল্লাহ ও তার স্ত্রীর সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করে দুদক। ২৮ সেপ্টেম্বর তারা দুজন সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। সম্পদ বিবরণীতে এ কিউ এম ইকরাম উল্লাহ এক কোটি ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ৯৩৬ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ২৯ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৪ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ এক কোটি ৬৬ লাখ দুই হাজার ৫৮০ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য দাখিল করেন। কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে এ কিউ এম ইকরাম উল্লাহর নামে চার কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩৫০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৩৬ লাখ পাঁচ হাজার ৪৩৬ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৭৮৬ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি মোট তিন কোটি ৬৭ লাখ দুই হাজার ২০৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনি ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪’-এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এ কিউ এম ইকরাম উল্লাহ ১৯৮৩ সালে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেডে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করেন। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৮৪ সালের ২০ মার্চ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঢাকায় সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। বিভিন্ন সময় পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৩ সালে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর রংপুরে যোগ দেন। ওই পদে থেকেই ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসর নেন।
তিনি ১৯৯২-৯৩ করবর্ষে আয়কর নথি খোলেন এবং রিটার্ন জমা দেন। তার আয়কর নথি ও অন্যান্য রেকর্ড পর্যালোচনায় সব দায়দেনাসহ গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ পাওয়া যায় দুই কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬৩৭ টাকা। মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ তথা নিট সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ চার হাজার ৭৮৬ টাকার, যার মধ্যে তিনি পারিবারিক ব্যয় করেছেন ৩৫ লাখ ১২ হাজার ৯৫২ টাকা। তার মোট অর্জিত সম্পদের মূল্য পাঁচ কোটি ৬৮ লাখ ১৭ হাজার ৭৩৮ টাকা। সম্পদ বিবরণী অনুসন্ধানকালে দুই কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬৩৭ টাকা আয়ের সঙ্গে পাঁচ কোটি ৬৮ লাখ ১৭ হাজার ৭৩৮ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন তার আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে প্রতীয়মান হয়। অর্থাৎ তিনি তিন কোটি ৫২ লাখ ৬৮ হাজার ১০১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪’-এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এছাড়া চারটি ব্যাংকে ১০টি ফিক্সড ডিপোজিট ও ছয়টি এফডিআর হিসেবে মোট দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা শুধু ২০১৩ ও ২০১৫ সালে তিনি জমা দিয়েছেন এবং সব হিসাব একই সঙ্গে ২০১৬ সালে বন্ধ করে সব টাকা উত্তোলন করে নেন। বিষয়টি তিনি তার আয়কর নথিতেও প্রদর্শন করেননি। এসব টাকা গোপন করার জন্য ব্যাংক থেকে উত্তোলন ও স্থানান্তর করে ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’-এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
আতিকা খাতুন সম্পদ বিবরণীতে পাঁচ কোটি ৭৪ লাখ ৮১ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং এক কোটি ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪৮ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ছয় কোটি ৯৩ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৮ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য দেন। যাচাইকালে তার নামে ১১ কোটি ৯৭ লাখ দুই হাজার ৯২৬ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং এক কোটি ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪৮ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৪ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। তিনি মোট ছয় কোটি ২২ লাখ ২১ হাজার ৯২৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪’-এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
তিনি ১৯৯০-৯১ করবর্ষে আয়কর নথি খোলেন ও রিটার্ন জমা দেন। তার গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ পাওয়া গেছে চার কোটি ৫২ লাখ ৪৮ হাজার ৫২৪ টাকা। নিট সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৪ টাকার। যার মধ্যে তিনি পারিবারিক ব্যয় করেছেন ২৮ লাখ ৬২ হাজার ৯৬৮ টাকা। তার মোট অর্জিত সম্পদের মূল্য ১৩ কোটি ৪৪ লাখ ২০ হাজার ৬৪২ টাকা। তিনি নিজ নামে আট কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ১১৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪’-এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
তাদের দুজনের বাড়ি কুমিল্লায়। বর্তমানে ঢাকার গুলশান-২ এলাকায় বাস করেন তারা।