ডিএসইর সাপ্তাহিক চিত্র

সক্রিয় ভূমিকায় প্রাতিষ্ঠানিক ও মূলধারার বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। খাতভিত্তিক লেনদেন থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে একক কোনো খাতের প্রভাব ছিল না লেনদেন ও শেয়ারদর বৃদ্ধি বা হ্রাসে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর কারণ হচ্ছেÑবর্তমান বিনিয়োগ পরিস্থিতি মূলধারার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এনেছে। এতে নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন মূলধারার বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে।

ডিএসইর লেনদেনের সাপ্তাহিক তথ্য বিশ্লেষণ ও বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য। গত ২৪ ডিসেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে ডিএসইতে মোট পাঁচ হাজার ৬২৩ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়, যা পূর্বের সপ্তাহের চেয়ে ৫৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। এ লেনদেনের ৭৫ শতাংশই ‘এ’ ক্যাটেগরির শেয়ার ও ‘বি’ ক্যাটেগরির হচ্ছে ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে মোট ৩৬৭টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে দর বৃদ্ধি পায় ১০৯টির, কমে ১৯৩টির, অপরিবর্তিত ছিল ৬২টির ও লেনদেনে অংশ নেয়নি তিনটি।

এই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১০ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট। ডিএস৩০ সূচক ৭৮ দশমিক পয়েন্ট ও শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস ২৩ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। লেনদেন ও মৌলভিত্তির শেয়ারদর বৃদ্ধির ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বৃদ্ধি পায় আট হাজার ৮৪৭ কোটি টাকার বেশি।

পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলো বাজারের প্রতি বার্তা যাচ্ছে। সুশাসন ও করপোরেট জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজার উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপগুলোকে ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। অপরদিকে ব্যাংকে সুদহার স্মরণকালের সর্বনি¤œ।

অনেক ক্ষেত্রেই জামানো সঞ্চয়ও কমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিাবাজার কেন্দ্রিক মনোযোগ হচ্ছেন অনেকেই। এছাড়াও মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা তালিকাভুক্ত হয়েছে। মোবাইল অপারেটরটির লেনদেন শুরু হওয়াও প্রভাব ফেলেছে বলে তারা মনে করছেন।

এ বিষয়ে দেশের স্বনামধন্য একটি সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা কিছুটা স্বস্তিবোধ করছেন। করোনা মহামারিতেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ভালো করেছে। কভিড-১৯ টিকা প্রয়োগ শুরু হলেও এ প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ হচ্ছেÑবর্তমানে বাজারে প্রচুর বিনিয়োগযোগ্য শেয়ার রয়েছে। এজন্য মূলধারার বিনিয়োগকারীরা ধাপে ধাপে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছেন। তারা মৌলভিত্তির কোম্পানিকেই বেছে নিচ্ছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ইতিবাচক পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা থাকলে পুঁজিবাজার আরও ভালো হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা মহামারিকালীন সময়ে ডিএসইতে খাতভিত্তিক লেনদেনের প্রবণতার ঝোঁক বেশি দেখা গিয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই খাতভিত্তিক লেনদেন বেশি হয়েছে। এর প্রভাবে খাতটির মধ্যে থাকা বিতর্কিত কোম্পানির শেয়ারদরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সেই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এর ফলে গত সপ্তাহে অধিকাংশ শেয়ারের দর পতন হলেও মৌলভিত্তির কোম্পানির ওপর ভর করে লেনদেন ও সূচক এগিয়ে যায়।

তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে লেনদেনে প্রভাব বিস্তার ছিল ‘এ’ ক্যাটেগরির কোম্পানির। লেনদেনে সর্বোচ্চ অবদান রাখে সাধারণ বিমা খাত ২৫ দশমিক পাঁচ শতাংশ, ওষুধ খাত ১৫ দশমিক চার শতাংশ, টেলিকম সাত দশমিক এক শতাংশ ও জীবন বিমা খাত আট দশমিক ৯ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড তিন শতাংশ, এনবিএফআই তিন দশমিক চার শতাংশ, ব্যাংক সাত দশমিক চার শতাংশ, প্রকৌশল খাত ৯ দশমিক চার শতাংশ ও বস্ত্র তিন শতাংশ অবদান রাখে।

খাতভিত্তিক মুনাফার প্রবণতায় সর্বোচ্চ সিমেন্ট খাতে আট দশমিক ৭৮ শতাংশ, সাধারণ বিমায় পাঁচ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ওষুধ খাতে দুই দশমিক ৫৫ শতাংশ, এনবিএফআই খাতে দুই দশমিক ২৯ শতাংশ মুনাফা দেখতে পান বিনিয়োগকারীরা। অপরদিকে লোকসানে সর্বোচ্চ চার দশমিক ৩৫ শতাংশ দেখা গেছে খাদ্য খাতে। এছাড়াও ব্যাংক খাতে পূর্বের সপ্তাহের তুলনায় এক দশমিক ১৪ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড তিন দশমিক ৩৬ শতাংশ, জীবন বিমায় দুই শতাংশ ও প্রকৌশল খাতে তিন দশমিক ১৮ শতাংশ লোকসান দেখা গেছে।

শেয়ারদর বৃদ্ধিতে একক কোম্পানি হিসেবে শীর্ষে উঠে আসে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও শাইনপুকুর সিরামিকস। অপরদিকে শেয়ারদর হারানোর শীর্ষে উঠে আসে ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিংস সিস্টেমস, ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার ও জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০