পিডিবির প্রতিবেদন

সক্ষমতার ১৮৬০০ মেগাওয়াট অলস থাকবে ২০২৭ সালে

ইসমাইল আলী: দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছাড়িয়েছে ২২ হাজার মেগাওয়াট। যদিও সর্বোচ্চ উৎপাদন রয়েছে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের নিচে। এরপরও উৎপাদনে আসছে নতুন নতুন কেন্দ্র। লাইসেন্স দেয়া হয়েছে আরও বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের। সেগুলো উৎপাদন আসার পাশাপাশি বাড়বে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি। তবে বিদ্যুতের চাহিদা সে অনুপাতে বাড়ছে না। এতে ২০২৭ সালে অলস বসে থাকবে ১৮ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, নতুন বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার পাশাপাশি ছয় বছরে বেসরকারি কয়েকটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে যাবে। ফলে ২০২৭ সাল শেষে বিদ্যুৎ সরবরাহ সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৪১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। যদিও সে সময় সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়াবে ২২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। ফলে চাহিদার সর্বোচ্চ ব্যবহার হলেও সে সময় ১৮ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকবে। উৎপাদন সক্ষমতার তা প্রায় ৪৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি বছর উৎপাদনে আসবে চার হাজার ৭৮৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে বছর শেষে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২৬ হাজার ৮৫১ মেগাওয়াট। কিন্তু চলতি বছর সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়াবে ১৫ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। এতে বছর শেষে ১১ হাজার ৫১ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকবে।

আগামী বছর উৎপাদন সক্ষমতা বাড়বে মাত্র ২৮৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার। এতে ২০২৩ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২৭ হাজার ১৪০ মেগাওয়াট। কিন্তু সে সময় সর্বোচ্চ চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১৭ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। এতে ২০২৩ সাল শেষে বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ১০ হাজার ৪০ মেগাওয়াট।

এদিকে ২০২৪ সালে বড় বেশকিছু কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এতে পাঁচ হাজার ৭৪৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এতে সে বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৩২ হাজার ৮৮৮ মেগাওয়াট। কিন্তু সে সময় সর্বোচ্চ চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১৮ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এতে ২০২৪ সাল শেষে বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ১৪ হাজার ৩৮৮ মেগাওয়াট।

যদিও পরের দুই বছর উৎপাদনে আসা নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা কমবে। এর মধ্যে ২০২৫ সালে এক হাজার ৪১৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এতে ২০২৫ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬ হাজার ৭৬৯ মেগাওয়াট। আর সে সময় সর্বোচ্চ চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১৯ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। এতে ২০২৫ সাল শেষে বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে ১৪ হাজার ৪০৫ মেগাওয়াট।

২০২৬ সালে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে আরও দুই হাজার ৪৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এতে ওই বছর শেষে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬ হাজার ৭৬৯ মেগাওয়াট। কিন্তু সে সময় সর্বোচ্চ চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ২১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। এতে ২০২৬ সাল শেষে বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ১৫ হাজার ৪৬৯ মেগাওয়াট।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যান আমরা রিভিউ করছি। বাংলাদেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা কত, সেটা পুনরায় নিরূপণ করা দরকার। কারণ অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকছে। এতে সরকারের ক্ষতি হয়। এর মধ্যে আবার কভিডের কারণে চাহিদার যে প্রাক্কলন করা হয়েছিল, সেটিও হচ্ছে না। মাস্টারপ্ল্যান রিভিউ করার পর যদি দেখা যায় প্রাক্কলনের চেয়ে চাহিদা কম, তাহলে পরিকল্পনাধীন কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা হবে। এছাড়া কয়লাভিত্তিক কয়েকটি কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে পর্যায়ক্রমে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। এতে স্বাভাবিকভাবে চাহিদার ১০ শতাংশ অধিক ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র রাখলেই চলে। সে হিসাবে বর্তমানে দেশে ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেই চলে। আর ২০২৭ সালে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদার প্রেক্ষিতে উৎপাদন সক্ষমতা লাগবে ২৫ হাজার ৮০ মেগাওয়াট। কিন্তু সর্বোচ্চ চাহিদার চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম. শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমানে দেশে অলস বসে আছে প্রায় ৩৮ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র। উৎপাদন না হলেও বেসরকারি খাতের বিভিন্ন কেন্দ্রের জন্য মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে। ভারসাম্যহীন পরিকল্পনার কারণে সরকারকে এ খাতে প্রতি বছর প্রচুর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ২০২৫ সাল পর্যন্ত নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রাখা উচিত।

উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ৯ হাজার ৯৯৬ মেগাওয়াট আর বেসরকারি খাতে রয়েছে ৯ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের রয়েছে এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র। আর ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে গত ডিসেম্বর শেষে বিদ্যুৎ সরবরাহ সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৬৬ মেগাওয়াট। আর গত বছর ২৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৭৯২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০