নিজস্ব প্রতিবেদক: ছয় ধরনের জাতীয় সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফা অন্যদের তুলনায় কম পাওয়া যাবে। আর বিনিয়োগ ৩০ লাখ ছাড়ালে মুনাফা আরও কমবে। গতকাল বিনিয়োগের অঙ্কের ভিত্তিতে তিন ধাপে লাভের হার ঠিক করে জাতীয় সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।
দেশে ৯টি জাতীয় সঞ্চয় স্কিম চালু রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টিতে বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার কমিয়ে আনা হয়েছে। স্কিমগুলো হলোÑপাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক-মেয়াদি হিসাব ও ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড।
তবে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক-সাধারণ হিসাব, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের মুনাফা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যারা নতুন করে সঞ্চয়পত্র কিনবেন, শুধু তাদের জন্য পরিবর্তিত এ হার কার্যকর হবে। আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেটি পুনর্বিনিয়োগ করলেও নতুন হারে মুনাফা দেয়া হবে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান- দুই ক্ষেত্রেই মুনাফার নতুন হার প্রযোজ্য হবে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পারিবারিক সঞ্চয়পত্র। পাঁচ বছর মেয়াদি এ সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার এখন ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। নতুন নিয়মে বিনিয়োগ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে ওই হারেই মুনাফা মিলবে। তবে বিনিয়োগ ১৫ লাখ টাকার বেশি হলে মুনাফা হবে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যাবে।
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যায়। নতুন নিয়মে এ সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে মুনাফা মিলবে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার কমে হবে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ।
একইভাবে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে তিন বছর শেষে ১১ দশমিক শূন্য চার শতাংশ মুনাফা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে নতুন নিয়মে এ সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে ১০ শতাংশ ও ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে ৯ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যাবে।
অবসরভোগীদের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে মুনাফা এখন ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। নতুন করে কেউ এ সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফার হার নেমে আসবে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ হলে মুনাফা হবে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে।
ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে তিন বছর মেয়াদি হিসাবে বর্তমানে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। নতুন নিয়মে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার হবে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ মিলবে।
ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের ক্ষেত্রে ২৪ মাস পর কিন্তু পাঁচ বছরের আগে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ মুনাফা প্রযোজ্য। এ বন্ডে বিনিয়োগ ১৫ লাখ টাকার বেশি হলে মুনাফা ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ, ৩০ লাখ টাকার বেশি হলে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে আট দশমিক ৪০ শতাংশে নেমে আসবে।
ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের সাধারণ হিসাবে বর্তমানে মুনাফার সাড়ে সাত শতাংশ, তাতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এ আদেশ জারির আগে যেসব সঞ্চয়পত্র কেনা হয়েছে সেগুলোয় কেনার সময়ের হারে মুনাফা দেয়া হবে। তবে মেয়াদ শেষে পুনর্বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে মুনাফার নতুন হার।
সব সঞ্চয় স্কিমে ক্রমপুঞ্জিভূত বিনিয়োগ বিবেচনা করে প্রযোজ্য হারে মুনাফা দেয়া হবে। এ আদেশ জারির পর বিনিয়োগ করা অর্থের মুনাফা দেয়ার ক্ষেত্রে আগের বিনিয়োগ বিবেচনায় নিয়ে প্রযোজ্য হারে তা দেয়া হবে।
যৌথ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর বর্ণিত সব সঞ্চয় স্কিমে মোট বিনিয়োগের ওপর হিসাব করে ঠিক করা হবে তারা কী হারে মুনাফা পাবেন। প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর ক্রমপুঞ্জিভূত বিনিয়োগের পরিমাণ আলাদাভাবে হিসাব করা হবে। সব সঞ্চয় স্কিমে মুনাফা দেয়া হবে সরল হারে।